নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চলমান শীতে বরিশাল জেলায় করোনা সংক্রমণ রুখতে নানাবিধ তৎপরতা শুরু করেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করোনার প্রকোপ রুখতে ধারাবাহিকভাবে চালানো হচ্ছে অভিযান। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা এবং সচেতনতা কার্যক্রম চলছে জোরেশোরে। কিন্তু অভিযানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হঠাৎ বাড়া শুরু করেছে জীবাণু প্রতিরোধী সামগ্রীর দাম। অভিযোগ উঠেছে অসাদু ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় বাজার সয়লাব হচ্ছে মানহীন মাস্ক , হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ অন্যান্য সামগ্রীতে। তবে এসব ব্যাপারে সজাগ থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ প্রচারণা বাস্তবায়ন ও করোনা প্রতিরোধী স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে জেলায় তিনটি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৬২ জন ব্যক্তিকে ১১ হাজার একশ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগের দিন জেলাজুড়ে ৮টি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৫২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২২ হাজার নয়শো টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার জেলার ১২৫ ব্যক্তিকে মাস্ক না পরার অপরাধে ২৬ হাজার দুইশো পঞ্চাশ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত।
এদিকে অভিযানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাস্কের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ করেছে কেউ কেউ। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে সত্যতা।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর সদর রোড এলাকার বিভিন্ন ভ্রাম্যমান দোকান এবং ফার্মেসিতে গিয়ে দেখা গেছে অতিরিক্ত দামে মাস্ক সহ অন্যান্য করোনা প্রতিরোধী সামগ্রী বিক্রির চিত্র।
একবার ব্যবহার করা যায় (অন টাইম) এমন মাস্কগুলো প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যা মাত্র দুদিন আগেও বিক্রি হতো ৫ টাকায়। এছাড়া এন নাইন্টি ফাইভ নাম দিয়ে বিক্রি করা মাস্কগুলো রাখা হচ্ছে ৯০ থেকে ১৫০ টাকা।যেগুলো কদিন আগে সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মানহীন হ্যান্ড স্যনিটাইজার ও জীবাণুনাশক তরল এবং স্প্রে বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারে। নামী কোম্পানীর বোতলের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে তৈরিকৃত বোতলে এবং প্রায় কাছাকাছি নাম দিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে এগুলো। যেগুলোর মোড়কে কিংবা বোতলের গায়ে কারখানার নাম ঢাকা উল্লেখ করা হলেও মূলত সেগুলো তৈরি হয় স্থানীয় পর্যায়ে। হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং যোগান কম থাকায় এ ধরণের অসাদু কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।
এ ব্যাপারে সদর রোড এলাকায় মাস্ক কিনতে আসা যুবক আসাদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি নগরীর মুন্সি গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা। আসাদ জানান, মাস্ক না থাকায় বুধবার তাকে ম্যাজিস্ট্রেট দুইশো টাকা জরিমানা করেছে। তাই কম মূল্যে বেশি মাস্ক সংগ্রহ করার আশায় তিনি এলাকার দোকানে না গিয়ে মূল শহরে ভ্রাম্যমান দোকানগুলোতে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসেও তাঁর চক্ষু চরকগাছ। কারণ কদিন আগে যে মাস্ক পাঁচ টাকায় কিনেছেন সেগুলো এখন পনেরো টাকার নীচে বিক্রি করছে না কেউ। এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসি পরিচালক জানান, মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হচ্ছে জেলাজুড়ে। তাই হঠাৎ মাস্ক কেনার ধুম পড়েছে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করার আশায় সবাই একটু বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করছে। অন্যদিকে শীতে করোনা বৃদ্ধি পাবে এই ভয়তে অনেকে হ্যান্ড স্যান্টিাইজার সহ বিভিন্ন জীবাণুনাশক তরল সংগ্রহ শুরু করেছে। কিন্তু যোগান না থাকায় বাধ্য হয়ে নামী প্রতিষ্ঠানের নকল পণ্য দোকানে রাখতে হচ্ছে। যেগুলোর লেবেলে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের বড় কারখানার ঠিকানা থাকলেও আদতে তৈরি হচ্ছে বরিশালেই। তবে অতিরিক্ত মূল্যে মাস্ক এবং মানহীন জীবাণুনাশক বিক্রি রোধে মাঠে নামবে প্রশাসন। এমনটাই নিশ্চয়তা দিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। তিনি বলেন, ‘মহামারির পরিস্থিতির যারা অসাদু ফায়দা নেবার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। বাজার নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে দ্রুতই অতিরিক্ত মূল্যে মাস্ক এবং মানহীন জীবাণুনাশক বিক্রি রোধে অভিযান চলবে। যেসকল ব্যবসায়ী এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে’।
Leave a Reply