আহমেদ রনি ॥ অনিয়ম আর দুর্নীতির আকড়ায় পরিণত হয়েছে বরিশাল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। বহুকাল যাবৎ প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা থাকলেও কেহই এগিয়ে আসেনি এর মূল উৎপাটনে। গোটা বিশ্ব যখন করোনার কড়াল গ্রাসে মূহ্যমান ও স্থবির ঠিক এ মূহুর্তে প্রতিষ্ঠানটির গুটিকয়েক অসাধু ব্যক্তিবর্গ তথা কর্মকর্তাদের কারণে এর সুনাম ধুলায় মিশতে বসেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন নানাঘুষা চলা অবস্থায় আমাদের অনুসন্ধানী চক্রের নিকট আটকা পড়ে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই বাছাইয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পর্যবেক্ষণকালে সেখানে থাকা এক কর্মচারী নাম না বলা শর্তে অনিয়ম এবং দুরাবস্থার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের টিটিসি বাউন্ডারিতে সর্বমোট ২৬টি কোয়ার্টার আছে। যা বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যবহার করে। তথাপি এর মধ্যে ১৫টি ফ্যামিলি সাবলেট দিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। অধিকাংশ কোয়ার্টারে এসি, রেফ্রিজারেশন, ওয়াশিং মেশিন ও এলইডি টেলিভিশনসহ রান্নার কুকার হিটার ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এদের প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ৩৫০-৪৬০টাকা পর্যন্ত। যাহা চিন্তার বিষয়! কেবল দু’তিনটি পরিবার ব্যতিরেকে বাকী সবাই এই বেআইনি কাজ কর্মে লিপ্ত থাকে। অপর এক সূত্র জানায়, সাবলেটকৃত ভাড়াটিয়াগণ কেহই বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করেন না। বিষয়টি উর্ধ্বত্মন কর্তপক্ষকে অবহিত করার পরে পর্যবেক্ষণকালে তাদের মেহমান কিংবা গ্রামের লোকজন বলে চালিয়ে দেয় ও পর্যবেক্ষণ মূহুর্তে তাদের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন থাকে বলে জানায় ওই নির্ভরযোগ্য সূত্রটি। ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে হলে অপর এক সূত্র জানায়, সরকারি বৈধ মিটারে লালবাতি জ্বলে না কিন্তু অবৈধ মিটারে লালবাতি জ্বলে। কোয়াটারে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক বিদ্যুৎবিল এর পরিমাণ প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা হলেও সরকারকে প্রদান করে ১০-১২ হাজার টাকা। যা অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল রাস্তায় বেড়িয়ে আসবে। নির্ভরযোগ্য সূত্র আরও জানান, ইনস্ট্রাকটর মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ লিটন ও মনোয়ারসহ অনেকেই সাবলেট ব্যবসায় জড়ানো যাহারা আদৌ ঠিকমত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন না। অনুসন্ধানি প্রতিবেদকের তদন্তকালে বেড়িয়ে আসে আরেক চিত্র। নাম না বলা শর্তে ওই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক জানান, ছাত্রাবাসে থাকা ৬০ জন শিক্ষার্থীকে এসডিএফ নামক এক এনজিও প্রতিষ্ঠান মাথাপিছু ১০০ টাকা করে দিলে প্রতিমাসে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করে ছাত্রদের খানাপিনার জন্য। কিন্তু শিক্ষার্থীদেরকে কেবলমাত্র ৭০-৮০ হাজার টাকার খাবার দিয়ে বাকী টাকা লোপাট করে দুজন অসাধু ব্যক্তি। শোনাযায় সকল অনিয়ম আর দুর্নীতির মূল হোতা প্রায় দুই যুগ ধরে টিটিসিতে কর্মরত মোঃ শহিদুল ইসলাম ইনস্ট্রাকটর (চলতি দায়িত্বে কেয়ারটেকার)। একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, সুচতুর শহিদুল দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ চাকরি করার সুবাদে সকলকে কৌশলে নিজের মায়াজালে আবদ্ধ করে নিয়েছে। তিনি তার চতুরতা দ্বারা যেকোনো প্রকৌশলী (অধ্যক্ষ) কে আপন করে নিয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে সময় পার করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। স্থানীয়রা জানান, সকল কলকাঠির মূলে রয়েছে ইনস্ট্রাকটর তথা কেয়ারটেকার শহিদুল ইসলাম। প্রয়োজনে উপস্থাপন করা যাবে সকল তথ্য। এ রিপোর্ট লেখার পূর্ব মুহূর্তে আমাদের প্রতিবেদক প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোঃ গোলাম কবির এর কাছে গিয়ে পূরো বিষয় অবগত করেন। কিন্তু প্রকৌশলী সৃষ্ট ঘটনার সদুত্তর না দিয়ে অন্য বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার অবতারণা করেন। তিনি বলেন, আমরা অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব। এদিকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বরিশাল ওজোপাডিকো (পিডিবি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলামকে জানানো হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের অজানা ছিল। তবে ঘটনার সত্যতা পেলে কু-চক্রীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। কোন কার্পন্য করা হবে না বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
Leave a Reply