দখিনের খবর ডেস্ক ॥ ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ২০ লাখ ডোজ বৃহস্পতিবার বুঝে পেয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র বলছে, ভারত থেকে কেনা টিকার প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ আসার কথা রয়েছে আগামী সোমবার। ওই টিকা আসার পর ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার একটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যবেক্ষণমূলক টিকাদান শুরু হবে। টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পর এবার শুরু হবে টিকাদানের পালা। তবে টিকাদানের সঠিক দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন পর্যায়ের পাঁচটি ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৯ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে মোট জনগোষ্ঠীর তিন শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এই তিন শতাংশের মধ্যে রয়েছেন কভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তিন লাখ ৩২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী। তাদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স এবং মিডওয়াইফারি পেশায় নিয়োজিত কর্মী, মেডিকেল ও প্যাথলজি ল্যাব কর্মী, পেশাদার স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্ন কর্মী, সাইকোথেরাপির সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা, মেডিসিন পারসোনেল, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্স চালকরা রয়েছেন। কভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বেসরকারি খাতের ছয় লাখ কর্মীও টিকা পাবেন। আরও পাবেন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, যারা স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ধাপে কাজ করলেও সরাসরি কভিড-১৯ মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত নন। যেমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কর্মী, বাণিজ্য কর্মী, ক্লারিক, লন্ড্রি কর্মী, অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য গাড়িচালক- এমন এক লাখ ২০ হাজার জনকেও টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া দুই লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, ফ্রন্টলাইনে কাজ করা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ সদস্যকে টিকা দেওয়া হবে। সেনাবাহিনী, নেভি, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ডের তিন লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ সদস্যও টিকা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ৫০ হাজার কর্মকর্তা এবং ফ্রন্টলাইনে কাজ করা ৫০ হাজার সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীকেও টিকার আওতায় আনা হবে। প্রথম ধাপে টিকা পাবেন এমপি, সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা কাউন্সিল, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভার কর্মী ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরাও। তাদের সংখ্যা এক লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার এক লাখ ৫০ হাজার কর্মীকেও টিকা দেওয়া হবে। টিকা পাবেন ধর্মীয় নেতারা। তাদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৪১ হাজার। আছেন দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার কর্মী, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস ও ফায়ার সার্ভিসের চার লাখ কর্মী। স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এক লাখ ৫০ হাজার কর্মী, প্রবাসী শ্রমিক এক লাখ ২০ হাজার। টিকা পাবেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি চার লাখ কর্মী। থাকবেন ব্যাংক কর্মী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন রোগী ছয় লাখ ২৫ হাজার। বাফার, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ৭৭ হাজার ৮০৪ কর্মীও প্রথম ধাপে টিকার আওতায় আসবেন। প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ৭ শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ প্রবীণ টিকা পাবেন। তাদের সবার বয়স ৬০ বছর বা এর চেয়ে বেশি। দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি ধাপে ১১ থেকে ২০ শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ টিকা পাবেন। এই পর্যায়ে টিকা পাবেন ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিক ৫৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৭, কো-মরবিডিটিসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯৩৬, শিক্ষক ও সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মী ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩, প্রথম পর্যায়ে বাদ পড়া গণমাধ্যম কর্মী ৫০ হাজার, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী ১০ লাখ ১১ হাজার ২২৮, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য ১০ লাখ, গণপরিবহন কর্মী পাঁচ লাখ, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ওষুধের দোকানের কর্মী দুই লাখ ৪২ হাজার ৯৬৪, গার্মেন্ট শ্রমিক ৩৬ লাখ, যৌনকর্মী ও তৃতীয় লিঙ্গের এক লাখ ৫০ হাজার সদস্য। তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ থেকে ৪০ শতাংশ বা তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১ থেকে ৫০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে টিকা পাননি এমন শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ছয় লাখ ৬৭ হাজার ২০৪, অনুমোদন সাপেক্ষে প্রসূতি ৩৮ লাখ ১৫ হাজার ২০১, অন্যান্য সরকারি কর্মচারী ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন। অন্য আইন প্রয়োগকারী কর্মী ৪৩ লাখ, অন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী ছয় লাখ, অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ২২ লাখ, রপ্তানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মী ২০ লাখ ৮১ হাজার ৮৮৪, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর কর্মী ২৫ লাখ, কয়েদি ও জেলকর্মী এক লাখ ৫৮৬, শহরের বস্তিবাসী বা ভাসমান জনগোষ্ঠী ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪, কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মী ১৬ লাখ ৫০ হাজার, ডরমেটরির বাসিন্দা পাঁচ লাখ, গৃহহীন জনগোষ্ঠী দুই লাখ, অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মী ৫১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৪, বাদ পড়া গণপরিবহন কর্মী তিন লাখ, বাদ পড়া ৫০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নাগরিক ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৩, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত চার লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ কর্মী টিকা পাবেন। তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ সর্বশেষ ধাপে টিকা পাবেন বাদ পড়া যুব জনগোষ্ঠী তিন কোটি ২২ লাখ ৩৪ হাজার, শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী তিন কোটি ৪৭ হাজার ১৫৭ এবং আগের বাদ পড়া আট লাখ ৪২ হাজার ৫৯৭ জন।
Leave a Reply