নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর অশি^নী কুমার হল চত্বরে ১৬ টি সেক্টরের দেড় সহস্রাধিক শ্রমিকদের বিশাল সমাবেশে ইমরান হাবিব রুমনকে সভাপতি, আব্দুল মানিক হাওলাদারকে সাধারণ সম্পাদক ও নুরুল হককে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৪৯ সদস্যদের ২য় জেলা কমিটি ঘোষণা করেন বাসদ বরিশাল জেলা সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ২য় জেলা সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী, মানিক হাওলাদার, বরিশাল রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন (খুলনা ২৩২৪) সভাপতি দুলাল মল্লিক, সোনারগাঁ টেক্সটাইল মিলস্ শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক, বরিশাল স্টিল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের মৃধা, বরিশাল ফেব্রিক্স শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন, অলিম্পিক সিমেন্টের ছাঁটাইকৃত শ্রমিক শাহ আরজুমান, বরিশাল ল্যাব এন্ড ডায়াগোনোস্টিক সেন্টারের শ্রমিক সংগঠক সন্তু মিত্র, বরিশাল জেলা ভ্যান শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি মো. রফিক, প্রেস এন্ড প্রিন্ট ডিজাইনার শ্রমিক সংগঠক কাজল কুমার দাস। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন বদরুদ্দোজা সৈকত। কমরেড রাজেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ৬ কোটি ৩৫ লক্ষ শ্রমিক। করোনাতেও থামেনি তাদের কাজ। শ্রমিকদের জন্যই সরকারি হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৪৬ ডলার। সে হিসেবে ৫ জনের একটি পরিবারের মাসিক আয় হয় ৭১ হাজার ৬০০ টাকার বেশি। কিন্তু কোন শ্রমিক পরিবার মাসিক এই আয় করতে পারে? সরকার বলছে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকের মজুরী মধ্যম আয়ের দেশের মতো নয়। একদিকে করোনার আঘাত অন্যদিকে মালিকের শোষণ, শ্রমিকের জীবন দু:খ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পুঁিজবাদী সমাজ মালিকের মুনাফার স্বার্থে শ্রমিক ঠকায়, খাদ্যে আর ঔষধে ভেজাল দেয়, দাম বাড়ায়, মানুষের বিবেক মনুষ্যত্ব নষ্ট করে। শ্রমিকেরা যেন একত্রিত হতে না পারে সেজন্য সচেষ্ট থাকে। এই নিষ্পেষনের চক্র ভাঙার লড়াই শক্তিশালী করতে ও শ্রমিক আন্দোলনে বিপ্লবী ধারা তৈরি করতে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নির্ভীকভাবে লড়ছে। শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন করে শ্রমিকের মুক্তি আনবে। ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, সারাদেশের শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষেরা আজ দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে। বরিশালে শ্রমজীবীদের অবস্থা আরও করুণ। বরিশালে শিল্প কলকারখানা নেই বললেই চলে। ফলে বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষকে রিক্সা-ভ্যান, দিনমজুরী বা ফুটপাতে হকারী করে জীবন ধারণ করতে হয়। এই পেশার মানুষদের সুরক্ষা সহযোগিতা না করে বরং বিভিন্ন সময় তাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলে যা খুবই অমানবিক। অবিলম্বে ভোলার গ্যাস বরিশালে এনে গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা নির্মাণ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। উচ্ছেদ নয় বরং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারি চালিত সকল যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। সভাপতির ভাষণে ইমরান হাবিব রুমন বলেন, বরিশালের সোনারগাঁ টেক্সটাইলের ৭শতাধিক শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছে, গত ৯ মাস থেকে কোন বেতন পাচ্ছে না শ্রমিক। তাই অবিলম্বে হয় কারখানা চালু করতে হবে নতুবা শ্রম আইন অনুযায়ি শ্রমিকদের সকল দেনাপাওনা বুঝিয়ে কারখানা বন্ধ করতে হবে। অলিম্পিক সিমেন্টের ৬৬ জন ছাঁটাইকৃত শ্রমিককের সমস্ত পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। বরিশালের সকল কারখানায় এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। সকল শ্রমিকদের পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র দিতে হবে। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে না শ্রম অধিদপ্তরকে শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। আজকের এই নতুন কমিটি আগামী দিনে বরিশালের সকল শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে অবিচল থাকবে, দৃঢ়ভাবে লড়াই সংগ্রাম করে যাবে। সমাবেশে বরিশাল স্টীল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারের হাতে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল নগরীর সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, বাজার রোড হয়ে অশি^নী কুমার হল চত্বরে এসে শেষ হয়।
Leave a Reply