নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর বাসভবনে ঢুকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিষ্টার প্রমিথ আমিনূল পরশকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলার মামলায় বহুল বিতর্কিত সাবেক কাউন্সিলর মো: ইউনুচ মিয়াকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল আদালতে হাজিরা দিতে গেলে বিচারক অভিযুক্ত ইউনুচ’র জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। এরআগে এই মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। পাশাপাশি ব্যারিষ্টার প্রমিথ আমিনূল পরশ’র ওপর সন্ত্রাসী হামলার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক কাউন্সিলর মো: ইউনুচ মিয়াকে প্রধান আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। চার্জশিটে অন্যান্য অভিযুক্ত আসামীরা হলো মো: নুরে আলম, মো: গোলাম সরোয়ার তাওহীদ, মো: রহমান, তানজিল আহসান, তানভীর আহসান। বিএমপির কোতয়ালী থানার এফআই আর নং ৮২,জিআর ৬৯১/২০২০,তারিখ-২৯ অক্টোবর ২০২০। ধারা : ১৪৩/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোড। মামলার চার্জশিটে সন্ত্রাসী হামলার হোতা ইউনুচ মিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ ধারামতে অপরাধের সত্যতা মিলেছে। জানা গেছে, বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড লাগোয়া শাজাহান চৌধুরীর বাড়ির বাসিন্দা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রফেসর ও সেভ হেলথ হসপিটাল ইনস্টিউিট’র চীফ কনসালটেন্ট ডা: এ.কে, এম আমিনুল হকের পুত্র ব্যারিষ্টার প্রমিথ আমিনূল পরশ। ডা: এ,কে, এম আমিনুল হকের পুত্রের ওপর গত বছরের ২৩ অক্টোবর ব্রাউন কম্পাউন্ডের বাসিন্দা সাবেক কাউন্সিলর ইউনুছের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল। এতে ব্যারিষ্টার পরশ গুরুতর আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাং-মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। হামলার ঘটনায় পরশের বাবা ডা: এ.কে, এম আমিনুল হক বরিশাল কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে হামলাকারীদের হোতা হিসেবে ব্রাউন কম্পাউন্ড’র মৃত: আলহাজ্ব নাজির আহমেদ এর পুত্র ভাড়াটিয়া ইউনুছ মিয়াকে চিহিৃত করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী শাজাহান চৌধুরীর বাড়ির স্বত্তাধিকারী ফজলে মাশরুর খানের কাছ থেকে এওয়াজ বদল করে কোতয়ালী থানাধীন সদর রোডস্থ জেএল নং ৪৯,খতিয়ান ১২১৪,দাগ নং ১২৬৭ এর হাবিব স্টোর,মধুবন ট্রেডার্স এবং মেটাল বাজার দোকান ও গোডাউনের এসএ,বিএস রেকর্ডের মালিক হয়ে সরকারি খাজনা পরিশোধ করে আসতেছি। ইউনুছ মিয়া ও বাকী পূববর্তী মালিক ফজলে মাশরুর খানের কাছ থেকে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর এক বছরের চুক্তি করে উপরোক্ত দোকান ঘর উচ্ছেদযোগ্য মাসিক ভাড়া নেয়। এবং চুক্তির মেয়ার শেষ হয়। উক্ত চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে কোন চুক্তিপত্র করেনি। আমি উল্লেখিত জমির মালিক হওয়ার পর হতে ইউনুছ, মো: নুরে আলম খোকন, নীরব হোসেন,বাকীকে নোটিশ প্রদান করলে তারা কোন দোকান ঘর খালি না করে জোরপূর্বক দখল করে আছে। আমি বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে আমার মালিকাধীন দোকান ঘরে উপস্থিত হয়ে বহুতল ভবন তৈরি করার জন্য দোকান ঘর, গোউাউন ছেড়ে দেয়ার জন্য বললে ইউনুছসহ অন্যান্য আসামীরা ভাড়ায় সন্ত্রাসী এনে আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও খুন জখমের হুমকি প্রদান করে আসছে। এজন্য এর আগে থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করি। যার নং ১২৬৩,তারিখ : ২৩-১০-২০২০ ইং। এরইধারাবাহিকতায় ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ইউনুচ এর নেতৃত্বে আসামীরা রড, লাঠি-সোটাসহ সদর রোডস্থ শাজাহান চৌধুরীর বাড়িতে বেআইনি জনতাবদ্ধে উপস্থিত হয়ে আমার মালিকানাধীন সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাত ৮টার দিকে ওই আসামীরা ঘটনাস্থলে এসে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে কূরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ কর। একইসঙ্গে আমাদেরকে বাসা থেকে নেমে যেতে বলে সন্ত্রাসীরা। এতে আমার ছেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিষ্টার প্রমিথ আমিনূল পরশ প্রতিবাদ করলে ইউনুছ ইট ও রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর দিকে অগ্রসর হয়। যার ভিডিও ফুটেজ সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। ভাড়াটিয়া ইউনুছের হামলায় আমার পুত্র ব্যারিষ্টার প্রমিথ আমিনূল পরশ’র মাথার তালুর পিছনে আঘাত লাগে। অপর আসামীরা ইট ও লোহার রড দিয়ে আমার পুত্রের ডান পার্শ্বের ঘারে এবং ডান হাতের বাহুসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে ফাটা ও ফুলা জখম করে। এছাড়া অন্যান্য আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা আমার পুত্রের ওপর হামলা করে। একই সময়ে আসামীদের মধ্যে কেউ আমার পুত্রের পকেট থেকে তাঁর ব্যবহৃত আইফোন এক্স ম্যাক্স (যার মূল্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা) কেড়ে নেয়। হামলার সময়ে আমার পুত্রের ডাকচিৎকারে আমিসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হলে আসামীরা হুমকী প্রদর্শন করে প্রকাশ করে যে, ভবিষ্যাতে যদি আমাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে সেক্ষেত্রে আমাকে ও আমার পুত্রের প্রাণ কেড়ে নিবে। এদিকে, ব্রাউন কম্পাউন্ডের বাসিন্দা সাবেক কাউন্সিলর ইউনুচের বিরুদ্ধে এরবাইরে অন্তহীন অভিযোগ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের ভাষ্য। সর্বশেষ ব্যারিষ্টার পরশকে হত্যা চেষ্টা মামলায় সোমবার ইউনুছকে কারাগারে প্রেরণের খবরে এলাকার শান্তিপ্রিয় নারী-পুরুষের মাঝে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছে।
Leave a Reply