বিদেশ ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিভিন্ন সূত্র জানায়, জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মুসলিমদের বন্দি করা এখনো থামেনি। চীন সরকার কর্তৃক এসব অত্যাচার নির্যাতনে এখনও কোনো উইঘুর মুসলিম প্রতিরোধমূলক কিংবা আত্মরক্ষামূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি’র এক বিশেষ রিপোর্টে উঠে এসেছে, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের হাজার হাজার উইঘুর এবং আরও নানা জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমাতে বিশেষ করে মুসলমানদের সংখ্যা কমাতেই নিজেদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে কাজের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ। বলতে গেলে এক অভিনব পন্থা অনুসরণ করছে চীন। তবে চীন সরকারের দাবি পুরোটাই অন্যরকম তাদের ভাষ্যমতে, চীনের মঙ্গাপিরিতো এলাকা গুলোতে বেকারত্বের হার বেশি। এই বেকারত্ব এবং দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যেই এসব চাকরি ও বদলির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদিকে বিবিসি’র পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণে আভাস পাওয়া গেছে যে, চীন মুসলমানদের এবং সংখ্যালঘুদের জীবনধারা ও চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনার জন্য গত কয়েক বছরে জিনজিয়াং প্রদেশ জুড়ে যেসব শিবির গড়ে তোলা হয়েছে তার পাশাপাশিই এসব চাকরিগুলোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই জরিপটি আসলে শুধু চীনের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরই দেখার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত তা অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে। চীনের প্রোপাগান্ডা রিপোর্ট, সাক্ষাতকার এবং বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে বিবিসি যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে -তার একটি অংশ হচ্ছে এই জরিপ। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় চীনের উইঘুর কাজাখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের তাদের বাড়ি থেকে বহু দূরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এবং যাওয়ার জন্য তাদের জোড় করেছে চীন সরকার। এক কর্মকর্তার সাথে উইঘুর স্থানীয় বাসিন্দার কথোপকথনে দেখা যায়, উইঘুর ওই বাসিন্দা বলছেন, আমি চাইনা আমার মেয়ে এতো দূরে চাকরিতে যাক, আমরা তো এখানেই উপার্জন করতে পারছি, আমরা যেমন আছি এই জীবন নিয়েই ভাল থাকতে চাই। কিন্তু তারপরও তাদের উপর সরকার থেকে চাপ দেয়া হতে থাকল এবং শেষ পর্যন্ত বুজায়নাপ কাঁদতে কাঁদতে রাজি হন। বলেন, ‘আমি যাবো যদি অন্যরাও যায়।’ ভিডিওটি শেষ হয় বুজায়নাপের মা’র কাছ থেকে কান্না করতে করতে যখন সে বিদায় নেয়। বুজায়নাপ এবং অন্যরা তাদের পরিবার এবং সংস্কৃতি পেছনে ফেলে রেখে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বিদায় নেওয়ার তিন মাস পর বুজায়নাপকে এক টিভি অনুষ্ঠানে আনহুইতে হুয়াফু টেক্সটাইল কোম্পানিতে কাজ করতে দেখা যায়। মানবাধিকার ও সমকালীন দাসত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হাল্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরা মার্ফি ২০০৪ সাল থেকে বহুবার জিনজিয়াংয়ে গিয়েছেন এবং থেকেছেন। ভিডিওটি দেখে তিনি বলেন, স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে যে, এটা এমন এক পদ্ধতি যেখানে জোর খাটানো হচ্ছে এবং কাউকে এতে বাধা দিতে দেয়া হচ্ছেনা। এর আগে চীনা সরকার সবসময় বলেছে, জিনজিয়াংয়ের লোকেরা স্বেচ্ছায় এসব কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। তার ভাষ্যমতে, এই ভিডিওতে অন্য যে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হচ্ছে চীন কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের স্থানান্তর করছে যদিও বলা হচ্ছে মানুষের দারিদ্র মোচনের কথা, কিন্তু এখানে মানুষের জীবনকে বদলে দেয়া হচ্ছে, পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, সংখ্যা লঘুদের তাদের শেকড় থেকে সরে নেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply