ক্রীড়া ডেস্ক ॥ এখন থেকে সিটির বিপক্ষে তাদের মাঠ ইতিহাদেই সব ম্যাচ খেলতে চাইবেন হয়তো ওলে গুনার সুলশার! আর চাইবেন নাই–বা কেন? সিটির মাঠে লিগ ম্যাচ খেলতে গেলেই যে জিতে আসছেন। সুলশার এলেই নিজেদের ‘দুর্গ’ আর সামলে রাখতে পারছেন না পেপ গার্দিওলা। গত রাতেও একই জিনিস হয়েছে। সিটির মাঠে গিয়ে তাদের ২-০ গোলে হারিয়ে এসেছে সুলশারের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২৮ ম্যাচ পর কাল হারল সিটি। আর এই নিয়ে সিটির মাঠে টানা তিন লিগ ম্যাচ জিতল সুলশারের দল। যে কীর্তি এর আগে শুধুই ছিল সুলশারের গুরু স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিটির মাঠে গিয়ে টানা চার লিগ ম্যাচ জিতে এসেছিলেন ফার্গুসন। এই জয়ের মাধ্যমে ঘরের বাইরে টানা ২২ লিগ ম্যাচে অপরাজিত থাকল ইউনাইটেড, যার মধ্যে ১৪ ম্যাচেই জিতেছে তারা। অর্থাৎ শুধু সিটির মাঠ বলেই নয়, ঘরের বাইরে বেরোলেই ভেলকি দেখাচ্ছে ইউনাইটেড। কে জানে, ঘরের বাইরের মতো ঘরের ভেতরের ফর্মটাও অমন থাকলে আজ সম্ভাব্য লিগ চ্যাম্পিয়নের জায়গায় সিটি নয়, বরং ইউনাইটেডের নামই লেখা হতো হয়তো! সিটিকে হারানোর পথে গোল করেছেন ব্রুনো ফার্নান্দেস ও লুক শ। ম্যাচের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সিটির ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসের ভুলে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইউনাইটেড। সেখান থেকে গোল করতে ভুল হয়নি ইউনাইটেডের পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেসের। দ্বিতীয়ার্ধে লুক শ–এর গোলটা ইউনাইটেডের অগ্রাগামিতাকেই ধরে রেখেছে আরও। অথচ এই লুক শ খেলতে পারেন কি না, সেটা নিয়েই সন্দেহ ছিল ইউনাইটেড শিবিরে। ম্যাচ শেষে কোচ সুলশারই জানিয়েছেন এই কথা, ‘আমি অনেক খুশি। প্রথম ১০ থেকে ১৫ মিনিটে আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময় ফলাফলটা ধরে রাখার জন্য খেলছিলাম। দ্বিতীয় গোলটা অসাধারণ ছিল। লুক শ দেখিয়েছে ও কেমন খেলোয়াড়। ও খেলতে পারবে কি না, সেটা নিয়েই আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। ওকে শেষ মুহূর্তে ফিটনেস পরীক্ষায় পাস করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। কী দুর্দান্তই না খেলল সে!’ শুধু লুক শ নন, গোল না পেলেও ফরাসি স্ট্রাইকার মার্শিয়ালের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছেন এই নরওয়েজিয়ান ম্যানেজার, ‘আমরা অনেক ভালোভাবে রক্ষণ করেছি। আক্রমণেও বেশ ভালো ছিলাম আমরা। আন্থনি মার্শিয়াল আমাদের ম্যাচসেরা, শ–এর মতো সেও খেলতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহে ছিলাম আমরা। আজকে যেভাবে খেলেছে ও, আমরা ওকে এভাবেই চিনি। ওর জন্যও অনেক খুশি আমি।’ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ২৮ ম্যাচ জেতার পর এই প্রথম কোনো ম্যাচ হারল ম্যানচেস্টার সিটি। টটেনহামের বিপক্ষে গত নভেম্বরে ২-০ গোলে হারার পর একটা ম্যাচেও হারেনি এত দিন সিটি। শীর্ষ পর্যায়ে পেপ গার্দিওলা যেসব ম্যানেজারের বিপক্ষে অন্তত তিনবার লড়েছেন, একমাত্র ওলে গুনার সুলশারই হারের চেয়ে জিতেছেন বেশি। গার্দিওলার বিপক্ষে সুলশার জিতেছেন চারবার, হেরেছেন তিনবার। তবে ম্যাচ হারলেও সিটির নজর শিরোপার দিকেই। লিগ জিততে এখনো গার্দিওলা বদ্ধপরিকর, ‘প্রথমেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে অভিনন্দন। আর দশটা ম্যাচ বাকি আছে লিগে। মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবেশ করেছি আমরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বাকি যে কয়টা ম্যাচ জেতা সম্ভব আমরা জিতব।’ ২০১৯-২০ মৌসুমের শুরু থেকে গার্দিওলার দল যে পাঁচবার ঘরের মাঠে হেরেছে, এর মধ্যে তিনটি হারই এসেছে ইউনাইটেডের বিপক্ষে। প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল—এমন সব শেষ ১০৩ ম্যাচে ইউনাইটেড কখনো হারেনি। এর মধ্যে জিতেছে ৯১ ম্যাচে, ড্র করেছে বাকি ১২ ম্যাচে। লুক শকে গোল করিয়েছেন রাশফোর্ড, এই নিয়ে চলতি মৌসুমে তাঁর দশটি অ্যাসিস্ট হয়ে গেল। ক্যারিয়ারে এক মৌসুমে এত বেশি অ্যাসিস্ট আর কখনো করেননি এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। ম্যাচ হারলেও ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে গার্দিওলার সিটি সবার ওপরে। ৫৪ পয়েন্টে নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ওদিকে আবারও ঘরের মাঠে হেরে যাওয়া বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল ধুঁকছে আট নম্বরে। কাল মিডফিল্ডার মারিও লেমিনার গোলে ফুলহামের বিপক্ষে হেরেছে লিভারপুল।]
Leave a Reply