ক্রীড়া ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাস মহামারিতে টোকিও অলিম্পিক এমনিতেই পিছিয়েছে। গত বছর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এ বছরের জুলাইয়ে। ২৩ জুলাই শুরু হবে এবারের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আসর। তার আগে আয়োজক দেশ জাপানকে বড় ধাক্কা দিল রাজনৈতিকভাবে তাদের বৈরী দেশ উত্তর কোরিয়া। করোনা মহামারি বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে টোকিও অলিম্পিকে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর কোরিয়া। আয়োজকেরা সম্ভবত এই ভয়ই করছিলেন। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জাপানের ওপর আস্থা পাবে তো? একনায়কতন্ত্র ধরে রাখা কিম জং-উনের শাসনাধীন দেশ অন্তত পাচ্ছে না। যদিও আন্তর্জাতিক দর্শকের আগমন টোকিও অলিম্পিকে নিষিদ্ধ করেছে জাপান। অ্যাথলেটদের সুস্থতা নিশ্চিতে প্রায় সব রকম পদক্ষেপই নিয়েছে দেশটি। কিন্তু জাপানে করোনার সংক্রমণের হার ক্রমে বাড়ছে আর টিকাদানের ব্যবস্থাও এগোচ্ছে ধীরগতিতে। টোকিও অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার অংশ না নেওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এক ওয়েবসাইট। গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় উত্তর কোরিয়ার জাতীয় অলিম্পিক কমিটি। ‘কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কা’ বেড়ে যাওয়ায় অ্যাথলেটদের রক্ষা করতে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেবে না উত্তর কোরিয়া। দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয় গতকাল খবরটি নিশ্চিত করার পর দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতিকদের মন খারাপ হতেই পারে। দুই কোরিয়ার মধ্যে বৈরিতার সম্পর্ক আজকের নয়। টোকিও অলিম্পিকে দুই দেশ অংশ নিলে থেমে থাকা শান্তি কার্যক্রম নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু করতেন কূটনীতিকেরা। ১৯৮৮ অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে। এমনিতেই বৈরী সম্পর্ক এবং তখন স্নায়ুযুদ্ধের পৃথিবীতে আলাদা বলয়ে ছিল দুটি দেশ। উত্তর কোরিয়া সেই সিউল অলিম্পিক বয়কটের পর এবারই প্রথম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক থেকে নাম তুলে নিল। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন এবার আশা করেছিলেন, টোকিও অলিম্পিক দিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। কৌশলগতভাবে দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। কারণ, ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী কোরিয়ান উপদ্বীপের যুদ্ধে অস্ত্র বিরতিতে সম্মত হয়েছিল দুই দেশ, শান্তি চুক্তি হয়নি। উত্তর কোরিয়া টোকিও অলিম্পিকে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আরও একটি বিষয় ধাক্কা খেল। ২০১৮ সালে এক সম্মেলনে দুই কোরিয়ার নেতারা সম্মত হয়েছিলেন ২০৩২ অলিম্পিকের যৌথ আয়োজক হওয়ার চেষ্টা করবে দুটি প্রতিবেশী দেশ। তবে উত্তর কোরিয়ার সরে দাঁড়ানো বিষয়ে আয়োজক দেশ জাপানের পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। জাপানের অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে বিষয়টি এখনো বলা হয়নি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী পরিষদ সচিব কাতসুনোবু কাতো জানিয়েছেন, তাঁর সরকার আশা করছে সব দেশ অলিম্পিকে অংশ নেবে। কারণ, সংক্রমণ রুখতে যা যা সম্ভব, সবই করবেন তাঁরা। দুই কোরিয়ার একীভূত হওয়ার এক নজির দেখা গিয়েছিল ২০১৮ পিয়ংচ্যাং শীতকালীন অলিম্পিকে। দক্ষিণ কোরিয়া আয়োজিত সেই শীতকালীন আসরে দেশের ক্রীড়াবিদদের দলের প্রধান হিসেবে নিজের বোনকে পাঠিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রধান নেতা কিম জং-উন। সমন্বিত একটি পতাকার তলে দাঁড়িয়েছিল দুই দেশের ক্রীড়াবিদদের দল, যা তখন প্রশংসিতও হয়েছিল। মেয়েদের আইস হকিতে যৌথভাবে দল গড়েছিল দুই কোরিয়া। কিন্তু গত মাসে অস্থিরতা বেড়েছে দুই দেশের সীমান্তে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে উত্তর কোরিয়া। যদিও দুই দেশের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছিল, শান্তির জন্য সংলাপ চালিয়ে যেতে রাজি।
Leave a Reply