ক্রীড়া ডেস্ক ॥ ‘বিজয়ী’ শব্দে আর ভালো লাগছে না ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। তাঁর এখন পছন্দ হয়েছে ‘দারুণ ভালো’ শব্দটাকে। সাদামাটাভাবে এমনটাই মনে হচ্ছে। যে প্রতিযোগিতায় অবিশ্বাস্য দাপট রিয়াল মাদ্রিদের, যে প্রতিযোগিতায় পাওয়া সাফল্যই তাদের গত শতাব্দীর সেরা ক্লাব বানিয়েছে, এই শতাব্দীতেও সেরাদের মধ্যে রেখেছে, সেই চ্যাম্পিয়নস লিগ আর খেলতে রাজি নন ক্লাবের সভাপতি। তাঁর দেখানো পথে হাঁটছে ইউরোপের আরও ১১ পরাশক্তি। কাল রাতেই এসেছে ইউরোপ তথা বিশ্ব ফুটবল কাঁপিয়ে দেওয়া খবরটি, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডসহ ১২টি ক্লাব ইউরোপিয়ান সুপার লিগ খেলতে যাচ্ছে। মাঠে, গ্যালারিতে আর রাস্তায় দা-কুমড়া সম্পর্ক হতে পারে, কিন্তু সুপার লিগ খেলতে চাওয়ায় এখানে গলায়-গলায় ভাব দেখাচ্ছে সবাই। ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াল, বার্সেলোনা ও আতলেতিকো মাদ্রিদ। বার্সার আগের সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ গত অক্টোবরে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের আগেই বলেছিলেন, তিনি সুপার লিগে যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে দিয়েছেন। একফালি রোদ দিয়ে বার্সায় বার্তোমেউর রেখে যাওয়া কালো মেঘ তাড়ানোর আশা দেখানো নতুন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তাও দেখা যাচ্ছে এই লিগের ব্যাপারে খুব একটা আপত্তি করছেন না। শুধু স্পেনের বড় তিন নয়, ইতালির প্রভাবশালী আরও তিন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইংল্যান্ডের তথাকথিত বড় ছয় ক্লাব। এভাবে ইউরোপের ফুটবল শক্তির বড় এক অংশের বিদ্রোহী হয়ে ওঠায় অবশ্য লাভ হচ্ছে নেইমারদের। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা, তাতে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বাদ এবার ফাইনাল না খেলেই পেয়ে যেতে পারে পিএসজি! স্পেনের ৩ ক্লাবের নাম তো বলা হলোই, বাকি ৯ দলের নামও এতক্ষণে জানা হয়ে যাওয়ার কথা। ইতালি থেকে এই বিদ্রোহী লিগে নাম লেখাচ্ছে জুভেন্টাস, এসি মিলান ও ইন্টার মিলান। আর ইংল্যান্ড থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, চেলসি, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি ও টটেনহামের আর চ্যাম্পিয়নস লিগে রুচি হচ্ছে না। কাল রাতে ১২টি ক্লাব একযোগে নিজেদের জন্য আলাদা এক সুপার লিগ আয়োজনের কথা জানিয়েছে। সঙ্গে জানিয়েছে, তারা ছাড়া আরও ৩ ক্লাবকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বানিয়ে ২০ দলের এই টুর্নামেন্ট খুব দ্রুতই শুরু করতে চায়। এমন ভয়াবহ সময়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেনি ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। রাতেই জানিয়ে দিয়েছে, সুপার লিগে অংশ নেওয়া সব ক্লাব ও ক্লাবের খেলোয়াড়দের উয়েফা ও ফিফার সব প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হবে। সেটা মহাদেশীয় পর্যায়ে হোক আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সোজা ভাষায়, রিয়াল, বার্সেলোনা, জুভেন্টাস, লিভারপুলে খেলা সব খেলোয়াড়কে ইউরো বা বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে আর দেখা যাবে না! ইউরো বা বিশ্বকাপ এখনো বহু দূরের পথ। এর চেয়েও কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল। আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগ হওয়ার কথা। একদিকে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ ও চেলসি। ওদিকে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে খেলবে পিএসজি। এখন উয়েফা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সুপার লিগে নাম লেখানো সব দলকে নিষিদ্ধ করা হবে, সে ক্ষেত্রে সেমিফাইনালে ওঠা চার দলের মধ্যে তিনটিই তো আর মাঠে নামতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে টুর্নামেন্টে খেলার উপযুক্ত দল বলতে টিকে থাকছে মাত্র একটি দল, পিএসজি। ওদিকে ইউরোপা লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনালকেও নিষিদ্ধ করা হলে সেমিফাইনালের অন্য দুই দল রোমা ও ভিয়ারিয়াল চলে যাবে ফাইনালে। তবে চলমান চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগেই নিষিদ্ধ করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় সুইজারল্যান্ডে মত্রে শহরে উয়েফার নির্বাহী কমিটি একটি আলোচনায় বসেছে। সেখানে ২০২৪ সাল পর্যন্ত উয়েফার সব প্রকল্প ও টুর্নামেন্ট নিয়ে আলোচনা হবে। এই আলোচনাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা উয়েফার। এরপরই জানা যাবে, সেমিফাইনাল না খেলেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের প্রথম রেকর্ড পিএসজি গড়বে কি না। তেমন হলে সেটা এর আগে কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ না জেতা, গত মৌসুমেই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলা পিএসজির জন্য একটু অদ্ভুত অভিজ্ঞতাই হবে!
Leave a Reply