প্রযুক্তি ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, তারা প্রথমবারের মতো মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে সফলভাবে একটি ছোট ড্রোন ওড়াতে সক্ষম হয়েছে। ইনজেনুয়িটি নামের এই ড্রোন মঙ্গলের আকাশে এক মিনিটের কম সময়ে ওড়ে। নাসা বলছে, অন্য আর একটি গ্রহের আকাশে এই প্রথম যন্ত্রচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত কোন যান ওড়ানোর এই সাফল্যে তারা উল্লসিত। মঙ্গল গ্রহ থেকে একটি উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠানো তথ্যে এই খবর পৌঁছেছে। নাসা বলছে, এই সাফল্য সামনের দিনগুলোতে আরও দুঃসাহসিক বিমান ওড়ানোর পথ প্রশস্ত করল। এই হেলিকপ্টারের ওড়ার ছবি নাসার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পৌঁছানোর পর কর্মীদের উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখা যায়। মাত্র এক দশমিক আট কেজি ওজনের হেলিকপ্টারটি মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে উড়ে ৪০ সেকেন্ড পর সফলভাবে অবতরণ করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইনজেনুয়িটি ড্রোনটির প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা পরীক্ষা করার পর এটিকে এখন তারা আরও উঁচুতে এবং আরও দূর পর্যন্ত ওড়াতে চান। নাসার পারসিভেয়ারেন্স রোভার যান এই ড্রোনটি বহন করে মঙ্গলে নিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই পারসিভেয়ারেন্স মঙ্গলের পৃষ্ঠে জেযেরো গহ্বরে অবতরণ করে। আশা করা হচ্ছে, এরকম ড্রোন দিয়ে এরপর থেকে মঙ্গল বা অন্য কোনো গ্রহের ভূ-প্রকৃতি এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণ অনেক সহজ হবে। “আমরা এখন বলতে পারি, মানুষ আরেকটি গ্রহের আকাশে ড্রোন জাতীয় আকাশ যান উড়িয়েছে,” বলেন ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার এক গবেষণাগারে ইনজেনুয়িটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মিমি অং। “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করেছি মঙ্গলের আকাশে ‘রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম বিমান ওড়ানোর মুহূর্ত কবে আসবে’, আজ আমরা সেই মুহূর্তে পৌঁছতে পারলাম।” দ্ইু ভাই উইলবার আর অরভিল রাইট ১৯০৩ সালে পৃথিবীর আকাশে প্রথম শক্তি-চালিত বিমান নিয়ে উড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। এটাকে সেরকমই এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ছবিতে দেখা যায় মঙ্গলের বুক থেকে মাত্র এক দশমিক আট কেজি ওজনের এই ড্রোনটি প্রায় ৩মিটার উপরে ওঠে, ড্রোনের পাখাগুলো ঘুরতে দেখা যায়, ড্রোনটি এদিক থেকে ওদিকে যায় এবং প্রায় ৪০ সেকেন্ড পর ড্রোনটি আবার সফলভাবে মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করে। মঙ্গলের মাটি থেকে কোন বায়ুযান গ্রহটির আকাশে ওড়ানো সহজ নয়। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের মাত্র ১% শতাংশ ঘনত্ব গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের। এর ফলে কোন পাখাওয়ালা বিমানযানের জন্য বাতাস কেটে খুব বেশি ওপরে ওঠা খুবই কঠিন। মঙ্গলগ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কিছুটা সাহায্য করে, তবে মাটি থেকে এধরনের ড্রোন বা হেলিকপ্টার মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে তোলার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। নাসা ঘোষণা করেছে যে মঙ্গলগ্রহের জেযেরো গহ্বরের যে জায়গায় পারসিভেয়ারেন্স নভোযান, ইনজেনুয়িটি ড্রোনটিকে নামায় সেই জায়গাটিকে এখন থেকে “রাইট ভাইদের অবতরণক্ষেত্র” নাম দেয়া হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রথম উড্ডয়ন সফল হবার পর আগামী দিনগুলোতে তারা আরও চারটি ফ্লাইট ওড়ানোর চেষ্টা করবেন। প্রতিটি ফ্লাইটে হেলিকপ্টারটিকে একটু একটু করে বেশি দূর পর্যন্ত ওড়ানো হবে। তারা এখন ড্রোন উড়িয়ে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠদেশ, গহ্বর ও গহ্বরের দেয়াল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
Leave a Reply