দখিনের খবর ডেস্ক ॥ প্রথম বিয়ের ৪০ বছরের মধ্যে আরও ২টি বিয়ে করার পরে স্বামীর চতুর্থ বিয়ের আয়োজনে প্রথম স্ত্রী বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে নির্যাতন নেমে আসে তার ওপরে। এছাড়াও বিয়ের ৪০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও যৌতুক নেয়া এবং চাওয়া শেষ না হওয়ায় নির্যাতন নেমে আসে স্ত্রীর ওপরে। পুরো ঘটনার বিষয়ে বানারীপাড়া থানায় মামলা হয়েছে। ২২ মে সকালে উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে স্বামী আবুল কালাম আজাদ (৫৬) ইটভাটার মালিক তাকে গ্রেফতার করে বরিশাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে- বাইশারী ইউনিয়নের আবুল কালাম হাওলাদারের সঙ্গে ৪০ বছর পূর্বে পিরোজপুরের গফ্ফার মল্লিকের মেয়ে শিরিন আক্তার মমি’র সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে মো. শাওন হাওলাদার (৩২) ও এক মেয়ে সাজিয়া আফরিন সায়মা (২৫) রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই কালাম তার স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। সংসার রক্ষায় শিরিণ আক্তার তার বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে স্বামীকে ১০ লাখ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে সে ডুমুরিয়া গ্রামে ইট ভাটার ব্যবসা শুরু করে। বিভিন্ন সময় তাকে আরও ৩ লাখ টাকা দেয় স্ত্রী শিরিন। এছাড়া মেয়ে জামাতার কাছ থেকে ইট ভাটার ব্যবসার কথা বলে কালাম ১০ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেয়। এরপরেও আরও ১০ লাখ টাকার জন্য সে স্ত্রী ও সন্তানদের নানাভাবে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন অব্যাহত রাখে। এদিকে কালাম স্ত্রীকে না জানিয়ে প্রথমে বরগুনায় খুকু মনি ও পরে পটুয়াখালীতে রিয়া মনি নামের দু’নারীকে বিয়ে করেন। এনিয়ে শিরিন ও কালামের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি আরও বেড়ে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিয়ের প্রতিবাদ করায় কালাম প্রথম স্ত্রী শিরিন ও তার ছেলে শাওনের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন এবং তাদের মারধর করাসহ নানা ভাবে হয়রাণি শুরু করেন। গত ৫ মে বিকালে যৌতুক দাবির বাকী ১০ লাখ টাকা না পেয়ে শিরিনের হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলাসহ বেদম মারধর করে তাকে বসত বিল্ডিংয়ে আটকে রাখা হয়। বিষয়টি কালামের ছেলে শাওন ৯৯৯ ফোন করে জানালে বানারীপাড়ার লবণসাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে উপ-পরিদর্শক নাসির গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। পরে তার ভাইয়ের ছেলে এসে তাকে পিরোজপুরে নিয়ে চিকিৎসা করান। কিছুটা সুস্থ হয়ে শিরিণ আক্তার বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে স্বামীর অকথ্য এ নির্যাতনসহ সব বিষয় খুলে বলেন। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে এ ব্যপারে শিরিন আক্তার বাদী হয়ে স্বামী আবুল কালাম হাওলাদার ও দেবর রফিকুল ইসলামকে আসামী করে বানারীপাড়া থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২২ মে সকালে উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রাম থেকে মেসার্স কালাম ব্রিকস’র মালিক কালাম হাওলাদারকে গ্রেফতার করে বরিশালে কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এদিকে কালাম জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পরে শিরিন ও তার ছেলের ওপর আবারও হামলা নির্যাতন করতে পারেন এ আশঙ্কায় তারা তটস্থ।
Leave a Reply