রাজাপুর প্রতিনিধি ॥ রাজাপুর উপজেলায় লাইজু নামে তালাকপ্রাপ্তা এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। বিষয়টি ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি চক্র আপসরফা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রসবের পর নবজাতককে বিক্রির চুক্তিও করেছে চক্রটি।স্থানীয় ইউনিয়নের আংগারিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। লাইজুর পক্ষে অভিযোগ দেয়ার মতো কোনো আপনজন না থাকায় ভুক্তভোগীর আইনি সহায়তা প্রাপ্তিতে দেখা দিয়েছে জটিলতা। সরেজমিন স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী লাইজু তার আট বছরের ছেলে নাঈমকে নিয়ে আংগারিয়ার একটি নির্জন নদীর চরে মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করতেন। ৭ বছর পূর্বে মা ও দেড় বছর পূর্বে বাবা মারা যাওয়ার পরে লাইজু তার ছেলেকে নিয়েই বসবাস করেন। পাশে লাইজুর বড়বোন থাকলেও সে তার কোনো খোঁজখবর রাখে না। নির্জন চরে লাইজুর বাড়িতে গিয়ে রাজাপুর ও সাউথপুর এলাকার রাহাদ, আবু সায়েদ, রফিক, মানিক, নয়নসহ ১৫-১৬ জন যুবক বিভিন্ন সময় জোর করে অবৈধ কাজে বাধ্য করত। এদের অনেকেরই নাম না জানলেও দেখলে লাইজু চেনে। এতে লাইজু এক সময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ নিয়ে এলাকার রোজিনা, সরোয়ার, লাইজুর খালু তোফাজ্জেল, লাইজুর বড়বোন সুখী বেগম এবং দুলাভাই লিটন হাওলাদার অর্থ বাণিজ্যে মেতে উঠে। একেক সময় একেক জনের নাম বলে লাইজুর স্বীকারোক্তি মোবাইলে ধারণ করে সেই ভিডিও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দেখিয়ে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয় একই চক্রটি। শেষে লাইজুর অবৈধ অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে বৈধ করতে চক্রটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে পুনরায় ৮০ হাজার টাকা লাইজুকে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয়। কিন্তু লাইজুকে দেয়া হয় মাত্র ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন খাবার। এমনকি লাইজুর সন্তান প্রসব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা মিয়া নামে এক রিকশাচালক দম্পতির কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় চক্রটি। এজন্য রিকশাচালক দম্পতির কাছ থেকে আগাম ৩০ হাজার টাকা নিয়ে রেজিয়া নামের এক দাইকে নিয়োগ করেন রোজিনা ও সরোয়ার। এলাকায় পুরো ঘটনাটি জানাজানি হলে গত বুধবার বিকালে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান। চক্রটি সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে লাইজুকে লুকানোর চেষ্টা করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ও সদর চেয়ারম্যানের সহায়তায় স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য নাজমা ইয়াসমিন মুন্নি অন্তঃসত্ত্বা লাইজুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার সকালে লাইজু একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। বাচ্চার জন্ম হওয়ার খবর পেয়ে বাচ্চা বিক্রয়ের চক্রটি মেডিকেল থেকেও বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ভুক্তভোগী লাইজু সাংবাদিকদের জানান, তাকে রোজিনা, সরোয়ার বিভিন্ন সময় পুলিশের ভয় দেখিয়ে বাহিরে বের হতে বা ঘটনা কারও কাছে না বলতে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছিল। অভিযুক্ত লাইজুর বড়বোন সুখী বেগম সাংবাদিকদের জানান, লাইজু একটা পাগল; কখনই আমাদের কথা শোনে না। ওর ব্যাপারে আমরাও কোনো খবর রাখি না। অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি আমরা জানি না। অভিযুক্ত রোজিনা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, বাচ্চা কেনাবেচা নিয়ে আমি কিছুই জানি না। বাচ্চা ডেলিভারির জন্য রেজিয়া নামে একজন দাই নিয়োগ করেছিল। রাজাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ঘটনা শুনে লাইজুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইজুর সন্তানের পিতার পরিচয় নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply