বরগুনা প্রতিনিধি ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার আন্ধারমানিক নদী উপজেলার দক্ষিনপাড়ের পারের সীমান্ত ঘেঁষে কলাপাড়া নদীর সঙ্গে মিলে গেছে। গুলিশাখালী নদী চাওড়া ইউনিয়ন নাইয়া পাড়া তিতকাটা হয়ে পায়রা নদীর সাথে মিশেছে। কুকুয়া নদী গুলিশাখালী সিমান্ত ঘেষে পায়রা নদীতে গিয়ে পড়েছে।
নদীপাড়ের প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন, তারা বাঁশবুনিয়া আমতলী, আড়পাঙ্গাশিয়া, টিয়াখালী নদী,আড়াপাঙ্গাশিয়া নদী, কচুপাত্রা দোন, বড় বগীর নদীতে নিয়মিতভাবে স্টীমার, বড় বড় লঞ্চ ও কোনো কোনো সময় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করতে দেখেছেন। উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের অফিস বাজার, গাজীপুর, গুলিশাখালী , কুকুয়া, আমতলী, আড়পাঙ্গাশিয়া, ছিল ব্যস্ত হাটবাজার। এসব এলাকায় নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল হাট বাজার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং মানুষের অসচতেনতায় অভ্যন্তরীণ নদীগুলো মরে যেতে শুরু করেছে। পানি না থাকায় দিনে দিনে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে আন্ধারমানিক, কুকুয়া, চাওড়া, আমতলী, টিয়াখালী, আড়াপাঙ্গাশিয়া, কচুপাত্রা দোন, বড় বগীর খাল,বগীর দোন ও বাশবুনিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ নদী। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। হলদিয়ার গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, গেলো ত্রিশ বছরে প্রাকৃতিক কারণে নদীর বাঁক পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত হওয়ায় বাশবুনিয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। ফলে স্থানীয় কৃষি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। যা কৃষি-প্রাণবৈচিত্র্যকে হুমকির সম্মুখীন করে দিয়েছে। টিয়াখালী গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী কৃষক মজিদ মিয়া বলেন, আগে টিয়াখালী নদীতে কত রকমের মাছ ছিল। এখন নদীতে পানি নাই। মাছও নাই। চাষের মাছ খেতে হয়। নোংরা পানিতে গোসল করে গায়ে চুলকানি হয়। নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় এবার বন্যা হয়েছে। তাই নদী খনন করা খুবই দরকার।
৭০ বছর বয়সী আব্দুল মান্নান বলেন, আমার পেশা ছিল মাছ ধরা। সব মাছই পাওয়া যেত আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে । এমনকি বর্ষার সময় ইলিশও পাওয়া যেত এই নদীতে। গত দশ বছর আগেও এখানে মাছ পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন নদীই নাই। মাছ পাব কোথায়?
চাওড়া গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মো. ওহাব মিয়া বলেন চাওড়া নদীর এলাকার পানি দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত হয়ে গেছে। ফলে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। এ পানি ব্যবহারে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণি নানা ধরনের চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চওড়া নদী অববাহিকা এলাকার মানুষ কৃষিকাজ থেকে শুরু করে গৃহস্থালীসহ দৈনন্দিন সকল কাজে চাওড়া নদীর পানি ব্যবহার করতো। এই নদীর পানি মেটাতো তাদের তৃষ্ণা আর দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজের পানির চাহিদা। আমতলী পৌর নাগরিক কমিটির সভাপতি মো. আবু ল হোসেন বিশ্বাস বলেন, আমতলীর শতাধিক হাটবাজারের সহজ যাতায়াত ছিল নৌ-পথেই। কিন্তু নদীগুলো শুকিয়ে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এসব হাঁট-বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কপথে অধিক খরচের জন্য বিক্রেতরা সে পথে পণ্য পরিবহন করছে না। এ নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় হাট-বাজারে নৌপথে মালামাল পরিবহনের অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। নদী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, উপজেলার নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে খননের জন্য সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.কাওসার হোসেন বলেন, নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের নানা ধরনের পরিকল্পনা আছে।
Leave a Reply