আমতলী প্রতিনিধি ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলা ও পৌর শহরের পল্লী বিদ্যুতের মনগড়া বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। প্রতি মাসে একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল আসে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বিল করে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে গ্রাহকদের তা পরিশোধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমতলী পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে মিটার না দেখে তারা অনুমান করে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করেছেন। সে কারণে প্রত্যেক বিদ্যুৎ গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল এসেছে। আগামি মাসগুলো থেকে তা সমন্বয় করে দেয়া ছাড়া অন্য কোন পথ এখন খোলা নেই এমনটাই জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে।
আমতলী পৌর শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসাযী মো: হানিফ মিয়া। তার বাসায় প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল আসতো ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। গত মার্চ মাস থেকে দেশেব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দেয়ায় তার শহরের ভাড়া বাসার লোকজন গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। মাঝে মাঝে তিনি বাসায় থাকলেও অধিকাংশ সময়ই তার বাসা খালি পড়ে থাকে। অথচ জুন মাসের শুরুতে তার তিন মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে দুই হাজার টাকা। মো: হানিফ মিয়া জানায়, প্রতি মাসেই তার বিদ্যুৎ বিল ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকার মধ্যে থাকে। সে অনুযায়ী মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে তার বিদ্যুৎ বিল আসার কথা ৯শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি নিয়ে তিনি আমতলী পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসে যোগাযোগ করলে আগামি মাস থেকে অতিরিক্ত বিলের টাকা সমন্বয় করে দেবেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। অপর গ্রাহক শহিদুল ইসলাম জানান, এক বছরে তার বাসায় বিদ্যুৎ বিল আসে ৩৬শ’ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো। অনুমান করে তিন মাসে কিভাবে ২৫শ’ টাকা বিল করলো সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার ধারণা বিদ্যুৎ বিভাগ কৌশল করে সকল গ্রাহকদের কাছ থেকে এক বছরের অগ্রিম বিদ্যুৎ বিল আদায় করে নিচ্ছে। তাছাড়া এই দুর্যোগে আমি এখন ২৫শ’ টাকা কোথায় পাবো। করোনায় আমার আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তিন মাসের বাসা ভাড়া বাকি। পরিবার নিয়ে দু’মুঠো খেয়ে থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করাটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
শুধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া ও গ্রাহক শহিদুল ইসলাম নয় এরকম অবস্থা আমতলীর প্রায় ৪০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। মহামারী করোনাভাইরাসে তিন মাস লকডাউনের সময় পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কয়েক কোটি টাকার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে গ্রাহকদের বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শত শত গ্রাহকরা। বিল নিয়ে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ জানালেও তাদেরকে অফিস থেকে বলা হচ্ছে ‘এখন যেভাবে বিল এসেছে তা পরিশোধ করুন। আবার বলা হচ্ছে অফিসে আসুন সমন্বয় করে দেয়া হবে’। আমতলী সদর ইউনিয়নের গ্রাহক আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রতিমাসে তার বাসায় বিদ্যুৎ বিল আসে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকার মতো। কিন্তু ৩ মাসে তাকে ২ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। যা তাকে ৩০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। পৌর শহরের এক বাসার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার বাসায় ৫ জন ভাড়াটিয়া রয়েছে। করোনার কারণে এখন তাদের আয় রোজগার সব বন্ধ। দুই মাস ধরে ভাড়াটিয়ারা তার বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগের মনগড়া, অনুমান নির্ভর ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের কারণে বিল পরিশোধ নিয়ে ভাড়াটিয়াদের সাথে আমার মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে।
একাধিক গ্রাহকরা জানান, প্রাণঘাতি করোনায় অধিকাংশ মানুষ এখন বেশিরভাগ সময় বাসায় অবস্থান করায় ২০ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বেশি আসাটা অস্বাভাবিক কিছু না। আর গড় বিলের তথ্য তো বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ছিলো। কিন্তু তারা গড়বিল না করে মনগড়া বিল করে গ্রাহকদেরকে বিপদে ফেলেছেন। আবার অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ থেকে বাঁচতে নির্দিষ্ট তারিখের আগেই বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওয়াতাধীন আমতলী সাব জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো: মোশাররফ হোসেন নান্নু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যে সকল গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল এসেছে আগামি মাস থেকে তা সমন্বয় করে দেয়া হবে। তবে এই দুর্যোগ মুহূর্তে করোনার মধ্যে গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের টাকা কোথা থেকে পরিশোধ করবেন তা জানতে চাইলে তিনি এর কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি।
Leave a Reply