পটুয়াখালী প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীতে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে প্রাণঘাতী সংক্রমণ কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতোমধ্যে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজারেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে।
গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন ১০ জন আক্রান্তসহ জেলায় মোট আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৫৫ জনে। এর মধ্যে অর্ধেকেও বেশি আক্রান্ত রয়েছে জেলা সদরে। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৫২ দশমিক ৫১ ভাগই রয়েছে জেলা সদরে। এসব আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৫৪ জন, বাউফলে ১৩২ জন, কলাপাড়ায় ১০৫ জন, গলাচিপায় ৮১ জন, দুমকিতে ৬১ জন, মির্জাগঞ্জে ৫৮ জন, দশমিনায় ৫৫ জন এবং রাঙ্গাবালীতে নয়জন রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, আইনজীবী, পুলিশ, র্যাব, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সংবাদকর্মী, শিল্পী-সাহিত্যিক, নারী কর্মী, এনজিওকর্মীসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
এদিকে প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। এর মধ্যে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় আটজন, বাউফলে নয়জন, গলাচিপায় পাঁচজন, কলাপাড়ায় পাঁচজন, দুমকিতে তিনজন, এবং মির্জাগঞ্জ, দশমিনা ও রাঙ্গাবালীতে একজন করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় আটজন, বাউফলে সাতজন, গলাচিপায় ছয়জন, দুমকিতে চারজন, কলাপাড়ায় একজন রয়েছে। গেল আট মার্চ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও পটুয়াখালীতে করোনা রোগী শনাক্ত হয় একমাস পর গত ৯ এপ্রিল। ওই দিন দেলোয়ার হোসেন দুলাল হাওলাদার (৩০) নামে এক গার্মেন্টস কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো এবং করোনাভাইরাস নিয়ে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে আসার তিন দিন পর মারা যান তিনি।
এরপর থেকে পটুয়াখালীতে জ্যামিতিক হারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে না তেমন। লোকজন যার যার মতো করে চলছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনও বলাই নেই পটুয়াখালী জেলায়। করোনা বিস্তর রোধে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার পরিপত্র জারি করেছে। এরপর থেকে শহর-বন্দর-গ্রামের পথচারী, ব্যবসায়ী, লঞ্চ ও বাস যাত্রী, অফিস-আদালত এবং রাস্তাঘাটে চলাচলকারী লোকজনের সঙ্গে মাস্ক থাকে ঠিকই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের মাস্ক থাকে তাদের থুতনির ওপর। এটা যেন এখন তাদের এক ধরনের ফ্যাশন (স্টাইল) হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে করোনার বিস্তররোধ কঠিন হয়ে পরেছে। বরং দিনে দিনে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, পটুয়াখালী জেলায় ৯ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এবং ওইদিন দুলাল হাওলাদার নামে এক গার্মেন্টস কর্মী মারা যান। এ পর্যন্ত এক হাজার ৫৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে মারা গেছে ৩৩ জন। সুস্থ হয়েছে ৬৭৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে চিকিসাধীন রয়েছে ৩৪৭। এছাড়াও জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়েও বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। মানুষ জনের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে করোনার আক্রান্তের হার ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়াও বর্তমানে নমুনা পরীক্ষার হার বেড়ে যাওয়ার কারণেও আক্রান্তের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
Leave a Reply