কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় টিয়াখালির নদী, খাল, জলাশয়কে নাল জমি হিসেবে বন্দোবস্ত দেখিয়ে রাতা রাতি অবৈধ অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব কর্মকর্তা উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় নদী, খাল হতে জেগে ওঠা নতুন চরের চর্চা ম্যাপ না করে ভুয়া বন্দোবস্ত দেখিয়ে জাল জালিয়াতি খতিয়ান সৃষ্টি এবং সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ১০ টাকার মওকুফ দাখিলা প্রদান করে আসছে। এতে কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারনে এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অদ্যবধি। সম্প্রতি এসব অভিযোগে অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও টিয়াখালী নদীকে নাল জমি দেখিয়ে সৃজিত ২০৬, ৩৮৬ খতিয়ান বাতিলের জন্য দুদক, চেয়ারম্যান বরাবরে
অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টিয়াখালী নদী হতে জেগে ওঠা নতুন চরের চর্চা ম্যাপ না করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মধুপাড়া ও লোন্দা মৌজায় ভুয়া ২৯-কে/১৯৫২-৫৩ বন্দোবস্ত, ভুয়া মিস কেস ৩১-কে/১৯৬১-৬২ ও ভুয়া ২৫-কে/১৯৫২-৫৩ বন্দোবস্ত এবং ভুয়া মিস কেস ১৮/১৯৬১-৬২ এর বরাতে ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা মো: আলতাফ হোসেন দু’টি ভুয়া খতিয়ান সৃষ্টি করেন। যা নিশান বাড়িয়া গ্রামের সত্তার, পিতা হাসেম ফকির, লুৎফা বিবি,স্বামী-সত্তার এবং মধ্য টিয়াখালী গ্রামের সেকান্দার হাওলাদার’র স্ত্রী রাজিয়া বেগম এর নামে জাল জালিয়াতি খতিয়ান সৃষ্টি করে ১৫ একর ভূমির বকেয়াসহ সরকারী ভূমি উন্নয়ন নুন্যতম কর ১ লক্ষ টাকার পরিবর্তে স্বামী-স্ত্রীর নামে ১০ টাকার মওকুফ ০৭১৩৩২৬ ও ০৭১৩৩২৭ দাখিলা প্রদান করে।
এতে কয়েক কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। জেলা অডিট সুপার মোস্তাফিজুর রহমান দাখিলা অডিট করার সময় এসব বিষয় রহস্যজনক কারনে এড়িয়েযান। গত ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপ দাশ স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে ২৯-কে/১৯৫২-৫৩, মিস কেস ৩১-কে/১৯৬১-৬২ ও ২৫-কে/১৯৫২-৫৩, মিস কেস ১৮/১৯৬১-৬২, ৬৩৩-কে/১৯৬৮-৬৯ ও মিস কেস ১৩১-কে/১৯৬৭-৬৮ এর সত্যতা এবং অস্তিত্ব বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের খতিয়ান ও বন্দোবস্ত এবং মিস কেস রেজিষ্ট্রার পর্যালোচনায় এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
তবুও রহস্যজনক কারনে অদ্যবধি উল্লিখিত ভুয়া বন্দোবস্ত কেস কিংবা খতিয়ান বাতিল করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা এবং নদী, খাল, জলাশয় শ্রেনীর দাগের ভূমি জাল জালিয়াতি খতিয়ান সৃজন করে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার সাথে জড়িত অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করা হয় দুদক চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরিত অভিযোগে। যার অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, ভূমি সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনও সহ স্থানীয় প্রেসক্লাবে।
কলাপাড়ার ধানখালীর প্রাক্তন ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (বর্তমানে খেপুপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্বরত) মো: আলতাফ হোসেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। জেলা অডিট সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভূমি বন্দোবস্ত, খতিয়ান সৃজন কিংবা দাখিলা প্রদান’র বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার এখতিয়ার। ভূমি কর হিসেবে আদায়কৃত অর্থ সরকারী কোষাগারে যথাযথ ভাবে জমা দেয়া হয়েছে কিনা সেটি দেখভালের দায়িত্ব আমার এখতিয়ার।’ কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, ’এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাই বিষয়টি না জেনে আমি কিছু বলতে পারছিনা।
Leave a Reply