ভান্ডারিয়া প্রতিবেদক ॥ ভয়াল ১৫ নভেম্বর উপকূলীয় অঞ্চল ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর লন্ডভন্ড করে দেয় সিডর। ২০০৭ সালের এই রাতে উপকূলে সকল জেলা উপজেলায় হঠাৎ আঘাত হানে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই লন্ডভন্ড করে দেয় সমগ্র উপকূল অঞ্চল। পাহার সমান জলোচ্ছাস ভাসিয়ে নেয় অসংখ্য মানব জীবন, বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু, বিধ্বস্ত হয় বেরীবাধ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভাট। পরদিন সকালে চোখমেলে দেখা যায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার পরিবার ও নিহতদের লাশের পাশে স্বজনদের আহাজারি। ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো থামেনি সিডরে স্বজন হারানোর সেই কান্না।
ভয়ালো সিডরের তান্ডবে মুহুর্তের মধ্যে ভান্ডারিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে লাখ লাখ গাছপালা উপরে পরে বাড়ী ঘর ভেঙে যায় এবং ঘুমান্ত মানুষ চাপা পড়ে। যোগাযোগ বাবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে, বিদুৎতের খুটি ভেঙ্গে তার ছিন্নভিন্ন হয়ে অন্ধকারে নিমজিত হয়ে থাকে প্রায় ৩ মাস, টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও হাজার হাজার ঘরবাড়ি, প্রায় ৫ শতাধিক ছোট বড় ব্রীজ কালভাট, ২শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মানুষ নিহত সহ অফিস আদালত, হাটবাজার সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রাস্ত হয়ে পরে। ওই রাতে উপজেলার হরিন পালা আদর্শ গ্রামের মনোয়ারা বেগমের স্বামী শাজাহানকে ভয়াল সিডর কেড়ে নেয়। সে দিন রাতের ঘটনা বর্ননা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন মনোয়ারা বেগম ও তার পরিবার। পশারিবুনিয়া গ্রামের আঃ মান্নানের স্ত্রী তার নিহত ছেলেকে এখন ও খুঁজে ফেরেন।
সিডরে স্বজনহারা পরিবার সাথে কথা বলে জানা যায়, ভয়াবহ সিডরের ১৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও নিহত স্বজনদের জন্যে কান্না রোল আজো থামেনি। জানাগেছে, সিডরের ১৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও অনেকের ভাগ্যেও পরিবর্তন ঘটলেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকশ পরিবার এখনো অভাব অনটনে নিমজ্জিত, ফলে আজো গৃহ নির্মাণ করতে পরেনি। অদ্যবধি এসব পরিবারগুলো পলিথিন ও খড়কুটো-বাঁশ দিয়ে ঝুঁপড়ি তৈরীকরে অনেক কষ্টে বসবাস করছেন। সিডরের পর পর এসব পরিবারদের পূর্নবাসনের সহয়তা হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে পেলেও তা ওই সময় অভাব আনাটনে খরচ করে ফেলেন।
উপজেলার চরখালী গ্রামের বিধবা বৃদ্ধ রাহেলা বেগম এর সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সাহায্য তাদের ভাগ্যে কিছুই মেলেনি। সিডরের পর কয়েকবার ৫-১০ কেজি চাল, পুরনো কাপড় ও কিছু হাড়ি-পাতিল ছাড়া কিছুই মোরা পাইনাই, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি ঘর চেয়েছেন।
আর এক গৃহবধূ কুলসুম জানায়, আগে ম্যোগো ভোটের সময় লাগতো, এখন-তো তাও কেউ জিগায় না। এ ছাড়া ওই এলাকার অভাবী পারুল, দিনমজুর দুলাল, স্বামী পরিত্যাক্তা রাশিদা, নাছিমা জানান, য্যাগো আছে হেরাই সাহায্য পায়, গরীবের পাশে কেউ থাকেনা। তারা বলেন, বাচাঁর তাগীদে জীবনযুদ্ধে করছেন তারা।
Leave a Reply