বেতাগী প্রতিবেদক ॥ বরগুনার বেতাগীতে রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন চটকদার নামে ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেবার নামে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে গলাকাটা রমরমা বাণিজ্য। ফলে সাধারণ মানুষ টাকা খরচ করেও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই। ইচ্ছামতো নিয়ম-কানুন তৈরি করে বছরের পর বছর রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এরা। নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামাফিক ফি। হাতুড়ে টেকনিশিয়ানরা অনেক ক্ষেত্রেই দিচ্ছেন মনগড়া রিপোর্ট। অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে এসব অননুমোদিত ক্লিনিকের অনেকটিতেই জড়িত রয়েছেন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৌরসভাসহ উপজেলায় ৬/৭ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদের অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। এরা প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তাদের এ কর্মকন্ড চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই চলছে রোগি দেখা থেকে অপারেশন পর্যন্ত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এরা ভুল রিপোর্ট দিয়ে রোগীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। রোগী অন্য কোথাও পূর্ণ রিপোর্ট করে সেটি প্রমাণিত হলে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় দফারফা করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। তাদের নেই কোন জরুরি বিভাগ, নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত যন্ত্রপাতি,পরীক্ষাগার বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট। ধার করা পার্টটাইম ডাক্তার দিয়ে চলছে জটিল অপারেশনসহ নানা চিকিৎসা। কম বেতনের অনভিজ্ঞ নার্স, আয়া ও দারোয়ানই হচ্ছে এসব হাসপাতালের একমাত্র ভরসা। কম্পিউটারাইজড, পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ও অত্যাধুনিক নামে নামিদামী ডাক্তারদের নাম সংবলিত চোখ ধাঁধানো ব্যানারসহ ডিজিটাল সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব ক্লিনিকে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য এসে অপচিকিৎসার জালে আটকা পড়ছেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সহজ-সরল অসহায় মানুষগুলো প্রতিনিয়তই তাদের পাতা ফাঁদে আটকে নিঃস্ব হচ্ছেন।
উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাদের তালিকাভুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৩টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাম হাসপাতাল ১টি ও শুধু হাসপাতালের সংখ্যা ১টি থাকলেও বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি। তালিকাভুক্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে মেসার্স খান প্যাথলজি ও নাভানা মেডিকেল সার্ভিসের ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত লাইসেন্সের মেয়াদ থাকলেও বর্তমানে নবায়নকৃত লাইসেন্স ছাড়াই চলছে এদের কার্যক্রম। অন্যদিকে ডক্টর’স ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিকস সেন্টার এবং মাতৃছায়া জেনারেল হাসপাতাল চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই। এছাড়া পৌরসভাসহ ইউনিয়নগুলোতে অবৈধভাবে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে অনেক ডেন্টাল ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বসার কথা মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে বলা হলেও তাদের কেউ কেউ মাসে দু-একবার এসে অপারেশন করে চলে যান। কোন ক্লিনিকেই নিয়মিত কোন ডাক্তার থাকেন না। এসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম ভাঙিয়ে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। জেলা কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত মনিটরিং কিংবা জবাবদিহি না থাকায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। উপজেলা প্রশাসনের নেই কোন নজরদারি। যে কারণে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে উপজেলায় রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তেং মং বরিশালটাইমসকে বলেন, বেতাগীতে ৫ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদের কোনটিরই লাইসেন্স নেই। এরা আবেদন করেছে কিন্তু এখনও কোন অনুমোদন পায়নি। তবে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সুহৃদ সালেহিন বরিশালটাইমসকে বলেন, এসব বিষয়ে আমার কাছে এখনও কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Leave a Reply