নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় এডিবির অর্থায়নে এলজিইডি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম ভেঙে কাজটি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছোট ভাইকে। কাজ শেষ না করেই ছয় মাস পূর্বে উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে ভবন নির্মাণের পুরো টাকা। সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরি স্থাপনের জন্য এডিবি থেকে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিপত্রের নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করার কথা থাকলেও স্থানীয় এমপির ছোট ভাইকে কাজ দেওয়ার জন্য কোটেশনের মাধ্যমে তিনজন ঠিকাদার নির্বাচন করেন তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। এরমধ্যে রয়েছে এমপির ছোট ভাই এস এম আল মামুন সরদারের নামে মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজ, চাচাতো ভাই সুমন সরদারের নামে মেসার্স ছোহা ট্রেডার্স এবং তাদের ঘনিষ্ঠজন মেসার্স খন্দকার কনষ্ট্রাকশনের প্রোপাইটার কামরুল খন্দকার। অভিযোগ ওঠেছে, লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ না করে গত বছরের জুন মাসের ২২ তারিখ লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য এমপির ছোট ভাই মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজের মালিক এস এম আল মামুন সরদারের নামে ৫ লাখ টাকা, তার চাচাতো ভাই মেসার্স ছোহা ট্রেডার্সে মালিক সুমন সরদারের নামে ১০ লাখ এবং মেসার্স খন্দকার কনস্ট্রাকশনের মালিক কামরুল খন্দকারের নামে ১০ লাখ টাকাসহ সম্পূর্ণ ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়। টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ মিয়া ও তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলীর স্বাক্ষর ছাড়া এলজিইডির বিল ভাউচার ও কোটেশন মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে কোথাও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর দেখা যায়নি। এছাড়াও ওই মূল্যায়ন কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ লিটন, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. দলিল উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন পালোয়ানসহ কোনো সদস্যের স্বাক্ষর দেখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরি নির্মাণ না করে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্থানীয় ঠিকাদার ও জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে, চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তড়িঘড়ি করে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা এলজিইডির ৫০ ফুট দূরত্বে মসজিদ সংলগ্ন ভবনের কাজ শুরু হয়। তাড়াতাড়ি করে কাজ করতে গিয়ে কাজের প্লানে ভুল করে আবার রাত জেগে ভাঙতে দেখা যায়। ফলে ভবন নির্মাণের অনিশ্চয়তায় স্থানীয় ঠিকাদার ও জনসাধারণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। খোজ নিয়ে জানা যায়, তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম গত বছরের জুলাই মাসের ৮ তারিখ দশমিনা উপজেলা থেকে বদলি হয়ে শরিয়াতপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এর এক মাসের মাথায় গলাচিপা উপজেলায় ওই বছরের সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ যোগদান করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খন্দকার কনস্ট্রাকশনের মালিক কামরুল খন্দকার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার লাইসেন্সে এমপির (শাহাজাদা) চাচাতো ভাই সুমন কাজ করে, আমি বিষয়টি জানি না।’ এমপির ছোট ভাই আল মামুন সরদার মুঠোফোনে বলেন, ‘এ বিষয় উপজেলা প্রকৌশলীই ভালো বলতে পারবেন, তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন।’ এ কথা বলেই তিনি ক্ষেপে যান। চাচাতো ভাই সুমন সরদার বলেন, ‘এ বিষয়ে ফোনে কথা না বলে সরাসরি কথা বলব।’ উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অল্প সময়ের কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়া হয়নি। কোটেশনের মাধ্যমে তিনটি ঠিকাদার নির্বাচন করে কাজ করে যাচ্ছি, তবে এমপি মহোদয়ের চাচাতো ভাই সুমন কাজটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের পুরো ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আমার কাছে রেখেছি, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঠিকাদারকে টাকা দেব না।’ বর্তমান দশমিনা উপজেলা প্রকৌশলী মকবুল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের নিয়ম অনুযায়ী একই প্রকল্পে ১০ লাখ টাকার বেশি কোটেশন করা যাবে না। তবে আমার আগের ইঞ্জিনিয়ার কিভাবে একটি ভবন নির্মাণে একই বরাদ্দে টেন্ডার কল না করে কোটেশন করেছে তা আমার জানা নাই, তিনিই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। আমাদের এমপি মহোদয়ের চাচাতো ভাই সুমন কাজটি বাস্তবায়ন করে।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘কোটেশন প্রক্রিয়ার সভাপতি আমি, তবে আমি বিষয়টি জানি না? আমার স্বাক্ষর ছাড়া উপজেলা প্রকৌশলী অথবা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিভাবে টাকা উত্তোলন করছে তাও আমার জানা নাই। তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলীই ভালো বলতে পারবেন।’ পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সত্তার হাওলাদার সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘একটি প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলে কোটেশনের মাধ্যমে করা যায়। তবে ২৫ লাখ টাকার ভবন নির্মাণে দরপত্র আহবান করে কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে।’
Leave a Reply