গলাচিপা প্রতিনিধি ॥ আলোয় আলোয় ভরে উঠবে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়ন। কুপি-বাতির পরিবর্তে জ্বলবে বিদ্যুতের বাতি। মুজিব শতবর্ষে এ দ্বীপ ইউনিয়ন দুটির মানুষের এটাই হবে বড় পাওয়া। এ দ্বীপ ইউনিয়ন দুটির প্রধান প্রতিবন্ধকতার একটির দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে আগামী ১০ জুন। চরকাজল ও চরবিশ্বাস দুই ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো জ্বলবে বিদ্যুতের আলো। আর এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটবে অন্ধকারের। ইউনিয়ন দুটির লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষায় আছে এ দিনটির। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকাবাসী রঙিন পোস্টার, ফ্যাস্টুন দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে ইউনিয়ন দুটি। সরেজমিনে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নে বিদ্যুতায়নের দায়িত্বরত ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম আবুল বাসার জানান, ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতে সাবমেরিন কেবল দিয়ে এ বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হয়েছে, যা দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সাবমেরিন কেবল লাইন। চরমুজিবে উপকেন্দ্র করে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরকাজল, চরবিশ্বাস, দশমিনা উপজেলার চরবোরহান, দশমিনা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরহাদি ও রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন দেওয়া হয়েছে। ‘ভোলা জেলা থেকে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ৭৯২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন রয়েছে। এসব ইউনিয়নে ৪৫টি গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রাম বিদ্যুতের আওতায় এলে মোট গ্রাহক হবে ২২ হাজার ৬৬৬ জন। এতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।’ তিনি আরো জানান, গ্রাহক হয়রানি বন্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গ্রাহকের বাড়িতে মিটারের লাইনের তার টানা আছে। সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিলেই অল্প সময়ে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ১০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এখানের বিদ্যুৎ উদ্বোধন করা হবে। চরকাজল ইউনিয়নের ছোটশিবা গ্রামের আসিয়া বেগম (৬৫) বলেন, ‘শহরে দেখতাম কারেন্টের লাইট জ্বলে, কারেন্টের পাঙ্খা ঘোরে। শহরের মানুষ শান্তিতে বাস করত। আর আমাগো ঘরে কুপি-বাতি জ্বলত। হেই সময় ভাবতাম-আহা! আমাগো গ্রামের ঘরেও যদি এমন পাঙ্খা ঘুরাতে পারতাম। আমরা চিন্তাও কারি নাই আমাগো ঘরে কারেন্টের বাতি দেইখ্যা যাইতে পারমু। এ সম্ভব অইচে শেখের বেটির লইগ্যা। আল্লায় হেরে বাঁচাইয়া রাখলে আমাগো লইগ্যা আরো কিছু করবে।’ চরবিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাবিহা শিলা বলেন, ‘আমরা আগেও কুপি-বাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতাম। কয়েক বছর সোলার লাইট চলছে। কিন্তু তাতে খুব একটা প্রয়োজন মেটাতে পারেনি। এবার বিদ্যুৎ পাওয়ায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হতে পারব। অবহেলিত দ্বীপ এলাকায় আইসিটি, শিক্ষা, কৃষি ও চিকিৎসাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। যা এ এলাকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো।’ এ বিষয়ে চরকাজল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রুবেল বলেন, এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষি ও মৎস্য পেশায় জড়িত। কিন্তু চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়ন দুটি দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় সরাসরি বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নদীবেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন দুটি বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। মুজিববর্ষে এটাই এ এলাকার বড় পাওয়া। চরকাজল ও চরবিশ্বাস ইউনিয়নের বিদ্যুতায়নের উদ্যোক্তা পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, আওয়ামী লীগের একটি ভিশন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের সব জায়গা যখন আলোয় ঝলমলে, তখন এ এলাকা অন্ধকার ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে রয়েছে অবহেলিতও। দ্বীপ ইউনিয়নবাসীর সব থাকলেও ‘আলো ছিল না’। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আলো পৌঁছে দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হওয়ার সাথে সাথে এখানকার জীবনমানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। এসব এলাকার মানুষ প্রকৃতির বৈরিতার সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করছে। এখন এখানে মাঝারি শিল্প-কারখানা তৈরি হবে। এতে শিক্ষা, কৃষি ও চিকিৎসাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে। তৈরি হবে নানামুখী কর্মক্ষেত্রের। শহরের উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও উন্নয়ন পৌঁছে যাবে।
Leave a Reply