বাউফল প্রতিনিধি ॥ শুধুমাত্র পীরের নির্দেশে এক যুবককে ১০১ কলসী পানি দিয়ে গোসল করানো হয়েছে যার দরুন যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফলে। টাকা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিথ এক ভন্ডপীরের নির্দেশমত মনিরুল ইসলাম নামের (২৫) একজন এতিম যুবককে রুটির সাথে চেতনা নাশক ওষুধ খাইয়ে তাঁর গায়ে ১০১ কলসী পানি ঢালার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী আমির হোসেনের বিরুদ্ধে। গত বুধবার আনুমানিক সকাল ৯ ঘটিকার সময়ে বাউফল পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড বকুলতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই যুবককে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকার সময় বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে অবস্থা খারাপ দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাথে-সাথে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। মনিরুল ইসলাম বাউফল পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের মৃত কবির হোসেনের ছেলে।
মনিরুলের স্ত্রী খালেদা বেগম অভিযোগ করেন, সম্প্রতি (২৫ আগস্ট) একই এলাকার আমির হোসেন খানের বাসা থেকে ৩লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। আমির হোসেন খান ফরিদপুরের এক কতিথ পীরের কাছ থেকে রুটি পড়া এনে সন্দেহবসত তার স্বামী মনিরুল ইসলামকে খাওয়ান। এর কিছু সময় পরে তাঁর স্বামী অসুস্থ্য হয়ে পরলে আমির হোসেন খান ওই কতিথ পীরের মোবাইল নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। কতিথ পীরের নিদের্শ অনুযায়ি তার স্বামীকে বুধবার সকালে পুকুর পারে নিয়ে তার গায়ে ১০১ কলশ পানি দেয়া হয়। এ অবস্থায় তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পরলে তাঁকে প্রথমে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডাঃ প্রশান্ত কুমার সাহাকে দেখানো হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবাবর পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, “মনিরুল ইসলামকে খাবারের সাথে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। ওই অবস্থায় তাঁর শরীরে একাধিকবার পানি দেয়ায় তিঁনি আরও অসুস্থ হয়ে পরেন। তাঁর অবস্থা খারাপ হওয়ায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার স্বজনদের পরামর্শ দেয়া হয়।”
এ বিষয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, “আমির হোসেন খানের সাথে জমি নিয়ে মনিরুল ইসলামদের সাথে দীর্ঘ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ জের ধরে মনিরকে সায়েস্তা করতে টাকা চুরির নাটক সাজিয়ে খাবারের সাথে পয়েজন মিলিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।” মনিরুলের পরিবারের স্ত্রী ও দুইটি নাবলক সন্তান ছাড়া তেমন কোন আত্মীয় স্বজন নেই। অভিযোগ অস্বীকার করে আমির হোসেন খানের বোনের জামাতা রফিক তালুকদার বলেন, “১০১ কলস পানি ঢালার ঘটনা মিথ্যা, তিঁনি(আমির হোসেন) এমন কিছু করে নাই। তাঁর মালামাল চুরি হয়েছে সেজন্য তিঁনি মনিরুল এবং আমাকে সহ ২০/২৫ জন লোককে রুটি পড়া খাইয়েছে। রুটিতে কোন ধরনের চেতনানাশক মিশানো থাকলে আমাদেরও একি অবস্থা হওয়ার কথা কারণ আমরা একসাথেই খেয়েছি।”
এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, “বিষয়টি জানার পরে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
Leave a Reply