নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস ফিল্ডে ৪টি কূপ থেকে দৈনিক ৮০ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ থাকলেও চাহিদা না থাকায় ৪০ থেকে ৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। আরও ২টি কূপ (টাগবি ও ভোলা নর্থ) রেডি হয়ে বসে আছে। টাগবি ২০১৭ এবং ভোলা নর্থ ২০১৮ সাল কূপ খনন করা হয়। অর্থাৎ ৩ বছর আগেই আরও বেশি গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে শাহবাজপুর (ভোলা) গ্যাস ফিল্ড। চাহিদা থাকলে এখনই ১২০ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলনে সক্ষম। চাহিদা না থাকায় গ্যাস তুলতে পারছে না বাপেক্স। একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হতে যাচ্ছে তাতে ৪০ এমএমসিএফডি গ্যাস চাহিদা তৈরি হবে। তারপরও ২০ এমএমসিএফডি গ্যাস থাকবে উদ্বৃত্ত। সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি আরও তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে ভোলায়। যার উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারিত রয়েছে ৬০০ মেগাওয়াট। তবে এটি এখনও প্লানিং পর্যায়ে। সহসা এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র আলোর মুখ দেখছে না। নিকট ভবিষ্যতে ভোলা বরিশাল-পাইপলাইন দৃশ্যমান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
সেই ভোলায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে চড়াদরে ৩টি কূপ খনন প্রকল্প কার স্বার্থে গ্রহণ করছে এমন প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের স্বার্থ নয়, বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা এই প্রকল্প রাশান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের বিদায়ী এক কর্মকর্তার ফরমায়েশে কাজটি শুরু করা হয়। পেছনে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা কলকাঠি নাড়ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। অথচ এর আগে যখন গ্যাজপ্রমকে দিয়ে টাগবি ও ভোলা নর্থ (বসে থাকা কূপ) খনন করার হয় তখনও আপত্তি উঠেছিল। তখন বলা হয়েছিল এসব কূপ এখন খনন করে কোনো লাভ নেই। এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করার সুযোগ থাকবে না। তখন সংশ্লিষ্টদের এমন আপত্তি সত্ত্বেও কূপ দু’টি অস্বাভাবিক দরে খনন করা হয়। যা এখনও পড়ে রয়েছে।
খালি চোখে হয়তো অনেকে কূপ খনন করে রেডি রাখাকে সমর্থন করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই অগ্রিম বিনিয়োগকে বিয়ের আগে সন্তানের বাড়ি করার মতো মনে করা হচ্ছে। কারণ এই টাকা ঋণ নিচ্ছে বাপেক্স যা সুদসহ গুণতে হবে। যেভাবে ২০১৭ সালে কূপ খনন করে ৪’শ কোটি টাকার বোঝা চাপানো হয়েছে বাপেক্সের কাঁধে। বাপেক্স নিজে করলে সর্বোচ্চ ১২০ কোটি টাকায় করতে পারতো। সময় নিয়ে এখন এসে করলেও কোনো অসুবিধা হতো না।
অপর একটি সূত্র জানায়- একইভাবে নতুন করে দু’টি অনুসন্ধান ও ১টি উন্নয়ন কূপ খননের কাজ দেওয়া হয়েছে রাশান ওই কোম্পানিকে। উন্নয়ন কূপের বিষয়ে জোরালো আপত্তি রয়েছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের। তারা এর কোনই যোক্তিকতা খুজে পাচ্ছে না। তারা মনে করছেন এখন নতুন করে কূপ খনন মানেই অলস বসে থাকবে। বসে বসে সুদ গুনতে হবে। ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভোলার কূপ খননের বিষয়টি বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। নাইকোকে যেমন বিশেষ ব্যক্তিদের লাভ-লস হিসেবে করে কাজ দেওয়া হয়েছিল, এখানে তেমনি হয়েছে। এখানে বিশেষ ক্ষমতা আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১০ টাকার কাজ একশ টাকায় দেওয়া হচ্ছে এমন অরাজকতার দৃষ্টান্ত বিশ্বের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোলায় কূপের প্রয়োজনীয়তা নেই এ কথা সঠিক নয়। এই মুহূর্তে চাহিদা নেই তবে নতুন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (নতুন বিদ্যুৎ (বাংলাদেশ) লিমিটেড) শীঘ্রই উৎপাদনে আসবে। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা প্লাস-মাইনাস ৪০ এমএমসিএফডি হবে। তখন ১০০ এমএমসিএফডি ছাড়িয়ে যাবে চাহিদা। পুরাতন কূপগুলো উৎপাদন কমে আসতে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কূপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর অনুসন্ধ্যান যতো বাড়ানো যায় ততোই জ্বালানি খাতের জন্য মঙ্গল। কিন্তু এই কাজটি বাপেক্স নিজে করতে পারতো কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে বাপেক্স এমডি এ প্রতিবেদককে বলেন, বাপেক্স আগেও করেছে এখনও কাজ করছে, আমাদের চারটি রিগ রয়েছে। আমরা ১ অক্টোবর সিলেট গ্যাস ফিল্ডের একটি কূপ (সিলেট-৭) খননের কাজ শুরু করেছি।
বাপেক্সের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট-৭ কূপ খননের জন্য ৭০ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাপেক্স। এখানে কাজ শেষে প্রফিট করবে রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটি। অথচ নিজের গ্যাস ক্ষেত্র ভোলায় প্রতিটি কূপ খননের জন্য রাশান কোম্পানিকে দিতে হবে ১৮০ কোটি টাকার ওপরে। অর্থাৎ তিনটি কূপে ৩৩০কোটি টাকা বাড়তি গুণতে হবে। তবে গ্যাজপ্রমের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী সব সময় সাফাই গেয়ে এসেছেন। এক সভায় প্রকাশ্য বলেছেন, আন্তর্জাতিক দরের তুলনায় অনেক কম মূল্যে কাজ দেওয়া হয়েছে গ্যাজপ্রমকে। অনেকে আমাদের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে।’
Leave a Reply