ভোলা প্রতিনিধি ॥ অবৈধ স্পিডবোট ব্যবহার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা ভোলা থেকে বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করছে। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে নয় বরং তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে চলাচল করছে এসব বোট। এসব বোটের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই তাদের। মেঘনা-তেতুলিয়া আর বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত দ্বীপজেলা ভোলা থেকে অন্য জেলায় কিংবা জেলার অভ্যন্তরের মনপুরা, চর নিজাম, ঢালচর ও চর কুকরি-মুকরিসহ বিভিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য নৌযান ছাড়া কোন বিকল্প নেই। অধিকাংশ রুটে লঞ্চ চলাচল করলেও কিছু কিছু রুটে যাতায়াত করতে হয় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারে। এসব নৌযানে সময় বেশী লাগায় বহু মানুষ তাদের জরুরি প্রয়োজনে স্পিডবোটে যাতায়াত করছেন। অথচ বোটগুলোর সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। যারা বোট চালাচ্ছে তাদেরও নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ। নেই বোট গুলোতে জীবন রক্ষাকারী কোন উপকরণ বা লাইফ জ্যাকেট। তাছাড়া উত্তাল নদী বা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ফিটনেসও নেই এসব স্পিডবোট গুলোর। স্পিডবোট গুলোর ধারণক্ষমতা কয়জন আর যাত্রী উঠছে কতজন সেগুলো দেখারও যেনো কেউ নেই। সব জেনেও প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোলা থেকে শত শত যাত্রী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা এবং ভোলার অভ্যন্তরীণ চরাঞ্চলে যাতায়াত করছেন এসব বোটে। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। লাহারহাট এলাকায় মারাও গেছে ২ জন। মাদারীপুরে মর্মান্তিক স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানির পরও থেমে নেই ভোলার স্পিডবোট গুলো। স্পিডবোট যাত্রী ইমতিয়াজুর রহমান জানান, চালকরা টাকার জন্য অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে এতে আমাদের জীবনে একটা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এছাড়া তাদের কোনো প্রশিক্ষণ তো নেই, নেই স্পিডবোটে লাইভ জ্যাকেটসহ কোন পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী। শফিকুল আলম জানান, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই তো দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। আমি আসার সময় যাত্রী নেওয়ার কথা ছিল ১০ জন কিন্তু নিয়ে আসে ১৩ জন। ভাড়াও ২ শত’র জায়গায় নিল ৩ শত টাকা। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষীপুর, তজুমুদ্দিন থেকে মনপুরা এবং বেতুয়া থেকে চর নিজাম ও ঢালচর এলাকার বিশাল নৌ-অঞ্চল ডেঞ্জার জোন। এসময় সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত বিশেষ জাহাজ ছাড়া সাধারণ লঞ্চ চলাচল যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে প্রতিদিনই উত্তাল সাগর পাড়ি দিচ্ছে মানুষসহ এসব বোটে। এছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হচ্ছে বোটের চালক আর মালিকদের ইচ্ছামতো। ঝুঁকি নিয়ে কিভাবে এসব নৌযান চলাচল করছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা নৌ-পুলিশের অফিসার ইনচার্জ বলেন, কোনোভাবেই অবৈধ এসব স্পিডবোট চলতে দেওয়া হবে না। আর বিআইডব্লিউটিএ ভোলার সহকারী পরিচালক মো: কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, তাদেরকে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য, ভোলার ১২ টি ঘাট থেকে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অন্তত দুই শতাধিক স্পিডবোটে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে।
Leave a Reply