একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শেষ সময়ে জমে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন, সরকারের সঙ্গে জোটগুলোর সংলাপÍসব মিলিয়ে রাজনীতিতে অন্য রকম একটি পরিবেশ। এসব রাজনৈতিক জোটে ভাঙাগড়ার খেলায় এটাও দেখা গেছে যে আদর্শগত বিরোধও গাঁটছড়া বাঁধার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো চাইছে সরকারকে চাপে রাখতে। অন্যদিকে সরকারও বিরোধী দলগুলোকে চাপে ফেলে দিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও সংলাপের মধ্য দিয়ে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার প্রয়াসও দৃশ্যমান। ওদিকে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন কিংবা তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারি দল আওয়ামী লীগ শুক্রবার থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যে সরকারের সঙ্গে আজ আবার বৈঠকে বসছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারপক্ষ তাদের সঙ্গে যে সংলাপ শুরু করেছে তার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে স্বস্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। দেশের মানুষ এখনো আশা করে একাদশ সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। সরকারের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সংলাপ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি, সরকারের নমনীয় অবস্থানÍসব মিলিয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের মানুষকে আরো আশাবাদী করে তুলেছে। বাংলাদেশে নির্বাচন সব সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা আদর্শের ফারাক থাকতে পারে, কিন্তু ভোটের মাঠে প্রতিপক্ষকে কৌশলে পরাজিত করাই থাকে সবার লক্ষ্য। প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা, মিছিল-মিটিং থেকে শুরু করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সব কর্মকা-ে ভোটার-সমর্থকদের উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া সবাইকে উজ্জীবিত করে। এবারও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। ভোটের রাজনীতিতে সবাই জিততে চায়। আমাদের রাজনীতি তথা নির্বাচনী সংস্কৃতিতে পরাজয় মেনে নেওয়ার মনোভাব কারো আছে বলে মনে হয় না। এ জন্যই ভোটের আগে-পরে কখনো কখনো কাউকে কাউকে অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে দেখা যায়। এর প্রভাব পড়ে ভোটের রাজনীতিতে, ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর। এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, একে অবশ্যই স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল বলা যেতে পারে। এই পরিস্থিতি বজায় রাখার দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। নির্বাচন সামনে রেখে কোনোভাবেই পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে হবে জনবান্ধব। মানুষের কল্যাণেই রাজনীতিÍএ কথাটি মাথায় রেখে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো পক্ষই যেন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে তীক্ষ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো প্রকার বিঘ্ন ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক। সঠিক সময়ে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানই দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
Leave a Reply