গত সোমবার রাত থেকে শুরু হয়েছে রিমঝিম বৃষ্টি। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বৃষ্টির মাত্রাও। সেই সঙ্গে ঘন ঘন বজ্রপাত। রাজধানী ঢাকার ভোরকে প্রায় অন্ধকার করে দিয়ে ঝুম বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে শুরু হয় আকাশভাঙ্গা ভারি বর্ষণ। বলা যায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমের প্রথম ভারি বর্ষণ। আর তাতেই ডুবে যায় রাজধানী ঢাকা শহর। অনুরূপ হয়েছে চট্টগ্রাম শহরেও। আবহাওয়া বিভাগের ভাষ্য, এদিন তিন ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৮৫ মিলিমিটার। আর তাতেই রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের অলিগলিসহ প্রধান প্রধান সড়কে জলস্রোত দেখতে হয়েছে নগরবাসীকে। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ সড়ক। ফলে নগরবাসীকে অনিবার্য নিপতিত হতে হয় চরম ভোগান্তিতে। খানাখন্দে ভর্তি ফুটপাথ, রাস্তাঘাট তদপুরি ম্যানহোল-ড্রেনের মুখসমূহ খোলা, সর্বোপরি জলমগ্ন। ফলে হাঁটাচলাও দায় পথচারীদের। অন্যদিকে সব রকম যানবাহন দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য, ভাড়াও দিগুণ-তিনগুণ। যত্রতত্র বিকল হয়ে যাওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা। ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেছেন, এই বৃষ্টি চলতি বছরের প্রথম শিক্ষা। দক্ষিণের মেয়র বলেছেন, কোমরপানিতে তো নাজেহাল হতে হয়নি। তবে শঙ্কা, আষাঢ় মাস দুয়ারে সমাগত। যখন-তখন বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছে, হবেও। পুরোদমে শুরু হলে তখন কি হবে বলা দুষ্কর। সেই তো প্রতি বছরের মতো চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা-জলাবদ্ধতা। এবার আষাঢ় মাস আসতে না আসতে শুরু হয়েছে অবিরাম অবিরল বর্ষণ, প্রায় প্রতিদিন। সত্যি বলতে কি গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই যেন ডুবতে বসেছে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম। ইতোমধ্যে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করতে শুরু করেছে টেকনাফের ওপর দিয়ে। ইতোপূর্বে ইয়াসের প্রভাবে প্লাবিত হয়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। ভারি বর্ষণে রাজধানীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে, এটি প্রায় প্রতি বছরের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। পানি অপসারণের ড্রেনগুলো প্রায় ভরাট তথা সচল না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি আটকে থেকে সৃষ্টি করছে অসহনীয় জলাবদ্ধতা। তদুপরি মেট্রোরেল ও পয়ঃনিষ্কাশনজনিত খননের কারণে প্রায় পুরো রাজধানী খানা-খন্দকসহ ছোট-বড় গর্তে ভর্তি। ফলে প্রতিদিনই যানবাহন ও লোক চলাচল পড়ছে হুমকির মুখে। ছোটখাটো নানা দুর্ঘটনাও ঘটছে। এর সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে করোনা মহামারীর আতঙ্ক। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ভীতিও অমুলক নয়, যা হানা দিয়ে থাকে প্রতিবছরই। নগরবাসীর এহেন দুর্ভোগ-দুর্গতির অবসান হবে কবে নাগাদ- তা নিশ্চিত করে বলতে পারে না কেউ। দুই সিটিতেই দুজন নতুন মেয়র দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাজধানীর খাল উদ্ধারও চলছে। তবে কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমেও দুর্ভোগ-দুর্গতি আরও বাড়বে বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঢাকার জলাবদ্ধতায় আগামী ৩৫ বছরে ক্ষতি হবে কমপক্ষে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ততোধিক হবে বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যথায় জলাবদ্ধতা ও নানা প্রাকৃতিক সমস্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম।
Leave a Reply