পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ ব্যাপারটি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা আছে। কিন্তু নেই সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং অভিজ্ঞতা যা কাজে লাগিয়ে বাস্তবায়ন করা যায় বসবাসযোগ্য পরিবেশ। জাতীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য এবং পানি সুরক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত। সর্বোপরি, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ দূষণজনিত মৃত্যুতে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ। পরিবেশ দূষণগত কারণে ২০২০ সালে শুধু শহরাঞ্চলেই মারা গেছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ। এর মধ্যে বায়ু দূষণজনিত কারণে মারা যান প্রায় ৫৬ হাজার এবং পানি, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কারণে মারা যান প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ। ওই বছরে শুধু ঢাকা শহরে মারা গেছেন ২৭ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে বায়ুদূষণে মারা যান প্রায় ৩০ হাজার, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ। এই পরিসংখ্যানটি বলে দিচ্ছে আমরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি। সব ধরনের দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখনই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘এনহ্যান্সিং অপারচুনেটিস ফর ক্লিন এন্ড রিজেলিয়েন্ট গ্রোথ ইন আরবান বাংলাদেশ : কান্ট্রি ইনভায়রনমেন্টাল অ্যানালাইসিস-২০২০’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ঢাকা, পাবনা ও কক্সবাজার শহরে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ঢাকার হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ শহরে পারিপার্শ্বিক বায়ু দূষণজনিত কারণে মারা যান প্রায় সাড়ে ৮ হাজার এবং আবাসস্থলের বায়ুদূষণে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মানুষ। এ ছাড়া পানি, স্যানিটেশন এবং অস্বাস্থ্যগত বিষয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাবে মারা গেছেন প্রায় ২ হাজার, পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ৩০০ জন, পানিতে আর্সেনিকের কারণে ৩ হাজার ২০০ এবং পেশাগত দূষণে মারা গেছেন প্রায় ৫ হাজার ২০০ ব্যক্তি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৪০ বছরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ৮৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া নন-কমপ্লায়েন্স শিল্প ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে শহরের বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের পানি দূষিত হচ্ছে। বাংলাদেশে পরিবেশের মারাত্মক সমস্যাগুলোর অন্যতম বায়ুদূষণ। শহরে বায়ুদূষণের প্রধান দুটি উপাদান হলো শিল্পকারখানা ও যানবাহন। বায়ুদূষণের উপাদানগুলো মূলত ধুলিকণা, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, কার্বন মনোঅক্সাইড, সিসা ও অ্যামোনিয়া। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপক হারে নিঃসরণ ঘটছে। যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠী তারা সিসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে (আইকিউ) ও স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ ব্যাপারটি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা আছে। কিন্তু নেই সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং অভিজ্ঞতা যা কাজে লাগিয়ে বাস্তবায়ন করা যায় বসবাসযোগ্য পরিবেশ। জাতীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য এবং পানি সুরক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত। সর্বোপরি, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
Leave a Reply