বর্তমান সরকার উন্নয়নের অভিগামিতায় হরেক রকম কর্মপ্রকল্পকে যেমন দৃশ্যমান করে তুলছে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কল্যাণেও বরাদ্দ বাড়াতে এগিয়ে এসেছে। প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রাসঙ্গিক ভাতা প্রদান বর্তমান সরকারের এক অনবদ্য কর্মযোগ। শুধু ভাতা দেয়া নয়, বিভিন্ন সময় তা বেড়ে যাওয়ার নজিরও আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানসহ নানা কল্যাণকর কার্যক্রম চালু করার কারণে গ্রামেগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের নিত্যজীবনের ওপর অর্থনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় অবদান জাতির জন্য পরম উপহার। বীর মুক্তি সেনানীদের সম্মানী ভাতাও সরকার বর্তমানে বাড়িয়ে এই অর্থবছরে ২০ হাজার টাকা করেছে। নতুন বাজেটে ’৯০-এর বেশি বয়সী মানুষের জন্য মাসিক ভাতার মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নব্বইউর্ধ প্রবীণদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আপাতত খসড়া প্রস্তাবে প্রতিজনকে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। এখন অবধি দেশের ৪৯ লাখ বৃদ্ধ মানুষকে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ লাখই ৯০-এর উপর বয়স। নতুন করে যে প্রস্তাবনা আসছে সেখানে আগের ২ লাখও যুক্ত হবে। সঙ্গত কারণেই তারা বয়স্ক ভাতার আওতা থেকে আলাদা হয়ে যাবেন। দারিদ্র্য বিমোচন, বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিত্য জীবনমানকে আরও সহনীয় এবং উন্নত করতে বর্তমান সরকারের নেয়া কর্মসূচী দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য এক বিশেষ কর্মপরিকল্পনা। সর্বজনীন পেনশন দেয়ার চিন্তা-ভাবনাও সরকার করে রেখেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সুরক্ষায় ইতোমধ্যে ১২৬টি কর্মপ্রকল্প সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শুরু করেছে। প্রতিবছর এমন সংখ্যা বরাদ্দ বেড়ে যাওয়ার চিত্রও স্বস্তিদায়ক। বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত সব সমস্যার মূলোৎপাটন করা সরকারের মহাপরিকল্পনা। ক্রমান্বয়ে তা আরও কর্মপ্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের সুযোগও তৈরি হবে। ইতোমধ্যে বয়স্ক ভাতা সংখ্যার দিক থেকে তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও আরও সম্প্রসারণের সদিচ্ছা সরকারের রয়েছে। তবে ৯০ বছরের বেশি মানুষের জন্য যে ভাতা দেয়ার কথা ছিল তা এখনও বাস্তবের মুখ দেখেনি। একটু দেরিতে হলেও আগামী অর্থবছর থেকে তা চালু হচ্ছে। যদিও ৯০ বছরের বেশি মানুষ বয়স্ক ভাতায় অন্তর্ভুক্ত আছেন তবু তাদের জন্য বিশেষ ভাতার প্রয়োজন। বয়স্ক ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা আর ৯০ বছরের উপরে প্রবীণদের জন্য তা ধরা হয়েছে ৩ হাজার টাকা। অতিপ্রবীণদের বার্ধক্যজনিত রোগ ছাড়াও পারিবারিক নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে অর্থ কষ্টের বিপাকে পড়ে তাদের প্রতিদিনের জীবনও বিপন্ন, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চলতি অর্থবছর থেকে তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ দেয়া সরকারের এক জনকল্যাণমূলক কর্মযোগ অবশ্যই। তবে সরকার প্রদত্ত বরাদ্দ নিয়ে যেন কোন গাফিলতি কিংবা নয়ছয় না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাও সচেতন দায়বদ্ধতা। প্রবীণদের যথার্থভাবে চিহ্নিত করাও সময়ের দাবি।
Leave a Reply