কৃষিবান্ধব সরকারের নানাবিধ ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং উদ্যোগের কারণে দেশে কৃষি আবাদ বেড়েছে। অপ্রচলিত ও অনেকটা উপেক্ষিত ফসল হিসেবে মাশরুমের চাষ এখনও পর্যন্ত কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করেনি। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক মাশরুমকে একটি সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, মাশরুম উন্নয়নে সরকার বড় প্রকল্প গ্রহণ করছে। একটি পুষ্টিকর ফসল হিসেবে মাশরুম চাষকে দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। রবিবার সাভারে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। অপরদিকে মাশরুম চাষীরা জানান, মাশরুম নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। এটি যে একটি পুষ্টিকর খাদ্য তা মানুষকে জানানোর জন্য ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন। বিশেষ করে চাষীরা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাশরুমের বিষয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। চাষীরা জাতীয় মাশরুম মেলার আয়োজন ও মাশরুম বিক্রির ও প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপনেরও দাবি জানান। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম প্রতি বছর উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাশরুম চাষের সঙ্গে জড়িত। বিশ্বের উন্নত প্রায় সব দেশই মাশরুম আমদানি করে। ফলে দেশে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ এবং মানসম্পন্ন মাশরুম উৎপাদন করতে পারলে বিদেশেও এই ফসল রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। করোনাকালে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন হাই প্রোটিনযুক্ত ডায়েটের। মাশরুম হাই প্রোটিনযুক্ত। হজম হয় তাড়াতাড়ি। প্রোটিন ছাড়াও এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। বিশেষ করে মধুমেহ, রক্তাল্পতা, ওবেসিটিতে যারা ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, ত্বক সজীব রাখতে, হাড় শক্ত রাখতেও মাশরুমের জুড়ি মেলা ভার। সুস্বাদু ও খাদ্যগুণ বেশি হওয়ায় গোটা বিশ্বে মাশরুমের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। আর এখন তা সহজলভ্যও বটে। হালে মাশরুম নিয়ে হইচই হলেও এর বহু পুরনো ইতিহাস রয়েছে। জাপানে এবং চীনে দীর্ঘ সময় ধরেই ওষুধ তৈরির জন্য মাশরুম ব্যবহার করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে প্যারিসে এক তরমুজ চাষী প্রথম মাশরুম চাষ শুরু করেন। তার থেকে গোটা ইউরোপে এবং পরে আমেরিকায় মাশরুম উৎপাদন ছড়িয়ে পড়ে। দেশে খুব বেশিদিন হয়নি মাশরুম চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু আজও মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে সচেতনতা ও প্রচার খুব কম। কয়েক বছর ধরে মাশরুম চাষ নিয়ে আমাদের দেশে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। শুধু চাষ নয়, মাশরুম এখন অনেকেরই প্রিয় খাবারের তালিকায় পৌঁছে গেছে। যারা মাশরুম চাষ করছেন ও খাচ্ছেন তাদের জন্য সুখবর হলো, সম্প্রতি এক গবেষণায় বের হয়েছে মাশরুম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। হানোফার শহরে প্র্যাকটিস করা চীনা বংশোদ্ভূত ডাঃ জিয়ে হুয়াং বলেন, অনেক রোগী নানা ধরনের মাশরুমের গুণাগুণে মুগ্ধ। এগুলোর নাম মাইটেক, পমপম, শিটেক কিংবা রাইশি। ডাঃ হুয়াংয়ের ভাষায় কোন কোন মাশরুম লিভারের জন্য ভাল। কফ-কাশি দমনে মাশরুম সাহায্য করে। কাজ করে সংক্রমণ প্রতিরোধী হিসেবেও। হাঁপানি, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, রক্ত জমাটবাঁধা কিংবা বহুমূত্র রোগে মাশরুমজাত ওষুধ ব্যবহার করা হয়। জনকল্যাণমুখী সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। দানা জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। চাল, গম, ভুট্টা মিলিয়ে দেশে এখন সাড়ে চার কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছরই কোন না কোন মাশরুম চাষ করা যায়। বাজারে এর দামও ভাল। সারাদেশে ব্যাপক আকারে মাশরুম চাষ সম্ভব। ফলে মাশরুম চাষকে সারাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। বিষয়টি সাধুবাদযোগ্য বটে।
Leave a Reply