অনাড়ম্বর ও নির্মোহ জীবনযাপনে সমর্পিত প্রাজ্ঞ কলমযোদ্ধা আবুল মকসুদ চিরদিনের মতো ভিন্ন জগতের বাসিন্দা হয়ে গেলেন। বহু বিশেষণে পরিচিত এই সাদামাটা লেখক নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মাটি, মানুষ আর দেশাত্মবোধের অপার মহিমায়। অতি সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত আবুল মকসুদ আড়ম্বরতাকে পরিহার করে যে অনন্য সাধারণ জীবনগাথা রেখে গেলেন তা তাঁর উত্তরসূরিদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করবে। পেশায় সাংবাদিকতা ও কলাম লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিতি পেয়েও গবেষণামূলক প্রবন্ধে সমাজ, রাজনীতি আর আন্তর্জাতিক বলয়ে যে মাত্রায় বিচরণ করেছেন তা এই বিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের অনন্য মনন শৌর্য। দেশপ্রেমিক, আদর্শনিষ্ঠ, অহিংস ও গান্ধীবাদী এই সংগ্রামী বোদ্ধা কোনদিন অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে আপোস না করে লড়াইয়ে শামিল হতেন। ব্যক্তি জীবনও স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন, আদর্শায়িত আর সাদাসিধে। ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর জন্ম নেয়া এই স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ৭৪ বছর বয়সে অনন্ত যাত্রার শামিল হলেন। তাঁর তাৎক্ষণিক মৃত্যুতে গণমাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যু অবধারিত হলেও কিছু লড়াকু মানুষের চলে যাওয়া জাতির জন্য চরম বিপর্যয়। আর এমন সব বিশিষ্টজনের শূন্য আসন পূরণ হবারও নয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ এই বিরল কলমযোদ্ধাকে বিভিন্নভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ ইরাকে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে তিনি নির্দ্বিধায় পাশ্চত্য পোশাক পরিধান ত্যাগ করতে কুণ্ঠিত হননি। এরপর থেকে তিনি সেলাই ছাড়া সাদা কাপড়ে অতিবাহিত করেছেন জীবন। গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন অনুসরণ করা এই বরেণ্য কলাম লেখক পরম শ্রদ্ধায় তাঁর পূর্বসূরিদের লালন-ধারণ করেছেন। পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলনেও তাঁর অংশীদারিত্ব ভুলে যাওয়ার নয়। তিনি তাঁর কর্ম আর দুঃসাহসিক অভিযাত্রার নির্ভীক পথিকের মর্যাদায় সাধারণ মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান করে নেবেন। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
Leave a Reply