বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ফেনী নদীর পানি চুক্তি সম্পাদনের পর এবার নির্মাণ করা হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক কিলোমিটার মৈত্রী সেতু। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দুই দেশ যুক্ত হলো সেতুতে। এই সেতু ত্রিপুরা-আগরতলাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হয়েছে। এর ফলে ভারত চট্টগ্রাম নৌবন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হলো। আগে আগরতলা থেকে নিকটতম সমুদ্রবন্দর ছিল ১৬০০ কিলোমিটার দূরে কলকাতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলার নিকটতম চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব মাত্র ১০০ কিলোমিটার। এর ফলে শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি অবাধ এবং সম্প্রসারণের পথ সুগম হলো। মৈত্রী সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেকথাই বলেছেন তাদের বক্তব্যে। এককথায় মৈত্রী সেতু প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নতুন বাণিজ্য করিডর, যার ফলে ব্যবসাবাণিজ্য বাড়বে বহুল পরিমাণে। বাড়বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এ বিনিয়োগ। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। অদূর ভবিষ্যতে জাপানও যুক্ত হতে যাচ্ছে এই করিডরে। বর্তমান বিশ্বে কানেকটিভিটি বা পারস্পরিক যোগাযোগ একটি বাস্তবতা, যা সংযুক্ত বিশ্বায়নের সঙ্গে। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সর্বোপরি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর পঞ্চাশ বছরে এটি একটি অনন্য উপহার ও সংযোজন অবশ্যই। তদুপরি উত্তর-পূর্ব ভারতের ল্যান্ডলগ ৭টি রাজ্যে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোসহ বিনিয়োগের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে, যা কাজে লাগাতে হবে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের। ইতোমধ্যে বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ের পর এবার শুরু হয়েছে বিবিআইএন কার্যক্রম। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপাল আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ২৫ বছর ধরে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এও সত্য যে, কম-বেশি আন্তঃবাণিজ্য চলছেও দেশগুলোর মধ্যে। সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগও রয়েছে। তবে পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির আওতায় যথাযথ অবকাঠামো ও পরিকাঠামো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বহুলাংশে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত ইতোমধ্যে নেপালে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও ভারত ভুটান, নেপালও তাই হতে যাচ্ছে। পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বাড়বে ১৭ শতাংশ আর সে দেশের ৮ শতাংশ। রফতানি বাড়তে পারে প্রায় তিন গুণ। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে রফতানি বাড়বে দ্বিগুণ। মূলত এটিই কানেকটিভিটির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুফল।
Leave a Reply