ফাল্গুনের শেষ না হতেই প্রথম কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির দর্শন মিলেছে রাজধানীবাসীর। শনিবার অপরাহ্নে আকাশ নিঝুম কাজল কালো হয়ে নেমে আসে। প্রতীয়মান হয় দিনের আলো নিভে গেল, সূর্য ডুবে ডুবে। এমনিতেই প্রবল ধূলি-ধূসরিত রাজধানীর রাস্তাঘাট, বিবর্ণ-বিশীর্ণ গাছগাছালি। আকস্মিক ধূলি ঝড়ে যা হয়ে পড়ে প্রায়ান্ধকারাচ্ছন্ন। বিশাল বিশাল অট্টালিকার সারি, সুউচ্চ সুশোভিত টাওয়ারসমূহ প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়। সঘন সজল নিবিড় আকাশে মাঝে মধ্যেই ঝলসে উঠে বিজলি ও বজ্রপাতের ঝিলিক। প্রবল হু হু শব্দে বইতে শুরু করে ঝড়ো বাতাস, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৫২ কিলোমিটার। গাছপালার পাতা, খড়কুটো, ছিন্নভিন্ন টুকরো কাগজ ইত্যাদি উড়িয়ে নিয়ে যায় মুহুর্মুহু। প্রবল দোল দিয়ে যায় রাজধানীবাসীর হৃদয়মনে। অনতিপরেই ঝরে পড়ে হিমশীতল বৃষ্টিÑ প্রথমে টুপটাপ বড় বড় ফোঁটায়, এরপরেই অঝোর ধারায়। যাতে অচিরেই সিক্ত হয় নাগরিক মন ও মনন। মুহূর্তে দূরীভূত করে দেয় নাগরিক জীবনের গুমোট, ক্লান্তি-শ্রান্তি, গ্রীষ্মের দাবদাহ। এই না হলে কালবৈশাখী! ৩০-৪০ মিনিটের এই ঝড়-তুফান বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে বৃষ্টিস্নাত, ঝকঝকে-তকতকে ফিটফাট। রাস্তাঘাট অলিগলি ভেজা ও সিক্ত। গাছগাছালি গোসল সম্পন্ন করে হাসিখুশি সবুজ। এখানে-সেখানে উঁকি দিচ্ছে নবপত্রপল্লব, আমের মুকুল, কাঁঠালের মুচি ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এদিনে ঝড়বাদল হয়েছে রাজধানীর বাইরেও অন্তত ছয়টি জেলায়। শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ও পরিবেশে শুরু হয়েছে ঋতু পরিবর্তনের খেলা। বিদায় বসন্তে একদিকে প্রকৃতি যেমন হাজির হয়েছে নতুন পাতা ও কুঁড়ি নিয়ে, অন্যদিকে ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে সর্দি-কাশি-জ্বর-হাঁচি ইত্যাদি উপসর্গ। বাড়তি উৎপাত-উপদ্রব কালবৈশাখী ঝড়বৃষ্টি বজ্রপাত। তার মানে চিরায়ত বসন্ত কিন্তু শুধুই উপভোগ-আনন্দের নয়, সেই সঙ্গে অল্পবিস্তর দুর্ভোগও বয়ে আনে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য সময়ে সময়ে প্রায় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। রাতে ঠাণ্ডা দিনে গরম এমনও দেখা যায়। সেই সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যায় দেখা যায় ঘন কুয়াশার দাপট। এর পাশাপাশি রাজধানীসহ শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য সমূহ উপদ্রবÑপ্রচণ্ড ধূলিদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ধূলিদূষণের দিক থেকে বিশ্বে প্রায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। স্বভাবতই মানুষকে এই বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেগ পেতে হয়। আর এজন্যই প্রধানত সর্দি-কাশি জ্বরের উপদ্রব প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে যাকে বলা যায় ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। এবারে এর প্রকোপটি কিছুটা হলেও বেশি। এর সঙ্গে বাড়তি উপদ্রব তথা প্রায় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে চীন দেশের মহামারীসদৃশ করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। সরকার অবশ্য এ বিষয়ে সবিশেষ সচেতন ও সতর্ক। জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-২০১৯-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একগুচ্ছ নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেছেন, যা সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। এ সবের মধ্যে অন্যতম দেশের ৮টি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, যা হবে সর্বাধুনিক ও বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য নিবেদিত। উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বাদে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে তিনটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সারাদেশে মা ও শিশুদের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে ৩০টি মারাত্মক রোগের ওষুধও দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। সরকারের এই জনস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকসহ বহির্বিশ্বে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন দেশে আবহমানকাল ধরে প্রচলিত ও অসুসৃত চিরায়ত চিকিৎসা এবং ওষুধপত্রের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে ভেষজ, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও হোমিওপ্যাথি। তবে এসব চিকিৎসা পদ্ধতি অবশ্যই আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে। সেই সঙ্গে ওষুধ ও পথ্য হতে হবে মানসম্মত। একই সঙ্গে দেশে রোগ নির্ণয়সহ আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সর্বাধুনিক প্যাথল্যাব প্রতিষ্ঠাসহ দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যকে সার্বিকভাবে প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে সর্বদাই।
Leave a Reply