বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় একটি বেসরকারী কোম্পানি প্রথমবারের মতো সে দেশে পাঠিয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার খাদ্যপণ্য। নারায়ণগঞ্জÑকলিকাতা নৌরুটে এই খাদ্যপণ্য পাঠাতে পাড়ি দিতে হবে ৭১০ কিলোমিটার নৌপথ। সময় লাগবে ৪ দিন। যে পরিমাণ পণ্য পাঠানো হয়েছে তা স্থলপথে পাঠাতে প্রয়োজন হতো অন্তত ৪০টি ট্রাকের। খরচও হতো বেশি। নৌপথে রফতানির ফলে সড়ক পথের চেয়ে ৩০ শতাংশ খরচ কম পড়ে। তবে এর জন্য সারাবছর ধরে নাব্য রাখতে হবে নৌপথগুলো। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নৌপথে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নদীগুলোর নাব্যবস্থা ফেরাতেও কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দসহ নিয়মিত ড্রেজিং, দখল ও দূষণ মুক্ত করার কাজও চলছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে গেলে আগামীতে বছরে রফতানি কমতে পারে পাঁচ-সাত শ’ কোটি ডলার। হাতে সময় আছে প্রায় ৫ বছর। এই সময় সীমার মধ্যে পণ্যের গুণগতমান বাড়ানোসহ বহুমুখীকরণ এবং রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে সারাবছর ধরে দু’দেশের নদীগুলো নাব্য রাখার ওপর। দীর্ঘদিন পরে হলেও একটি সুসংবাদ মিলেছে। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে অন্তত দুটি নৌরুট খননে সম্মত হয়েছে। এ নিয়ে দেশ দুটির যৌথ মনিটরিং কমিটিও গঠিত হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে খনন উপযোগী নৌপথ পরিদর্শন করেছেন। এই দুটি নৌরুট হলো যমুনার সিরাজগঞ্জ থেকে দইখাওয়া পর্যন্ত ২৯২ কিলোমিটার এবং আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত ২৮৫ কিলোমিটার নৌপথ। নদী খননের খরচ বহন করবে দুই দেশ যৌথভাবে। যাতে বাংলাদেশ কর ও ভ্যাটসহ ৩৫ শতাংশ এবং ভারত ৬৫ শতাংশ বহন করবে। উল্লেখ্য, গত বছর দুই দেশের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে রাজশাহী থেকে পাকশী পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদী যৌথভাবে খননের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই খননের খরচের ৮০ শতাংশ ভারত এবং ২০ শতাংশ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। যৌথভাবে নদী খননের মাধ্যমে নাব্য রক্ষাসহ দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি সর্বোপরি পারস্পরিক পর্যটনের পথ প্রশস্ত করার জন্যও এর প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, নদী না বাঁচলে বাঁচবে না বাংলাদেশ, ভারতও। সে অবস্থায় নদ-নদীর সুরক্ষায় দুই দেশেরই এগিয়ে আসা আবশ্যক যৌথভাবে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির সুসম বণ্টনও জরুরী।
Leave a Reply