সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ায় সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব এক প্রজ্ঞাপনে জারি করেছেন ১৮ দফা নির্দেশনা। সরকার আপাতত লকডাউন-শাটডাউনের কথা না ভাবলেও জরুরী প্রয়োজনে যেসব অঞ্চলে সংক্রমণ ও মৃত্যু হার বেশি, সেসব স্থানে তা প্রয়োগ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে। ১৮ দফা নির্দেশনায় গত বছর ৬৬ দিনব্যাপী জারিকৃত লকডাউনের অনেক কিছুই আছে, যা আপাতত মেনে চলা প্রত্যেক দায়িত্বশীল নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, চীনসহ ইউরোপ, আমেরিকার করোনাভাইরাসে চারিত্র্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বাংলাদেশ বা উষ্ণমন্ডলীয় করোনা ভাইরাসে সম্ভবত পার্থক্য রয়েছে। শীতপ্রধান তথা তুষারপাত কবলিত অঞ্চলে যে করোনাভাইরাসটি সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটছে তার উল্টোটি। এখানে বরং গ্রীষ্মে করোনা তা-ব বেড়ে যায়, যা এখন দৃশ্যমান। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আলোকপাত করতে পারেন অবশ্যই। অন্যদিকে এবারের ভাইরাসের রূপ তথা চরিত্র সম্ভবত বদল করেছে, যা অত্যন্ত সংক্রামক ও হন্তারক। যে কারণে মৃত্যুর হারও বাড়ছে। এ বিষয়েও গবেষণা জরুরী। তবে আপাতত সবারই ১৮ দফা নির্দেশনা মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য। এর প্রয়োগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। তদুপরি করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োগ আরও বাড়াতে হবে সারাদেশে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়ছে প্রতিদিন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা একে দ্বিতীয় নাকি তৃতীয় ঢেউ বলে অভিহিত করবেন তা তারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট। এমনকি আইসিইউ বেড পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য। দেশে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার প্রস্তুতি চললেও বিশেষ করে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বাড়ছে সংক্রমণ। যে কারণে শিক্ষাঙ্গনসমূহ খুলে দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও এই মুহূর্তে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রোজা ও ঈদের পর ২৫ মে নাগাদ তা খুলতে পারে। করোনায় বহির্বিশ্বের পরিস্থিতিও আরও সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হয়েছে সরকার। সবার মুখে মাস্ক পরাসহ সাবান-স্যানিটাইজার ব্যবহার সর্বোপরি স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এসব বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। প্রয়োজনে আইন করে জেল-জরিমানা করার বিধানও কার্যকর হচ্ছে। এখন থেকে ঘরের বাইরে গেলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এমনকি মসজিদ-মন্দির-দুর্গাপূজা, রোজা-ঈদ উৎসব, জনসমাবেশ, হাটবাজার, যানবাহন- প্রায় সর্বত্রই মাস্ক পরতে হবে ছোট-বড় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। মাস্ক না পরলে জরিমানা অর্থাৎ অর্থদ- করা হবে। হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা হতে পারে। মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সরকার গত জুলাই মাস থেকে মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও পরে তাতে শৈথিল্য দেখা দেয়। নাগরিকদের মধ্যে প্রায় সর্বত্র যেন গাছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। এমতাবস্থায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে। মাস্কও এখন সস্তা ও সুলভ হয়েছে। তাই মাস্ক ব্যবহারে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। এখন থেকে প্রত্যেক নাগরিককে ঘরের বাইরে যেতে হলে মুখে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তা তিনি অফিস-আদালত, হাট-বাজার, সুপারশপ-সুপার মার্কেটসহ যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান- যেমন বিয়েশাদি, যেখানেই যান না কেন। এর পাশাপাশি সবাইকে মেনে চলতে হবে ১৮ দফা স্বাস্থ্যবিধি।
Leave a Reply