দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন দেয়া হয়েছে ১৪ এপ্রিল তথা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকে। আপাতত সাত দিনের কথা বলা হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় তা বাড়তে পারে আগামীতে। উল্লেখ্য, গত বছর দেশে যখন প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়, তখন সরকার লকডাউনের পরিবর্তে ঘোষণা করেছিল সাধারণ ছুটি এবং তা বাড়িয়েছিল দফায় দফায়। তখন একটানা ছুটি ছিল ৬৬ দিন। তবে এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আক্রমণে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বাড়তে থাকায় সরকার ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করে। জারি করে ১৮ দফা নির্দেশনা তথা স্বাস্থ্যবিধি। প্রায় সব রকম যানবাহনের চলাচলে আরোপ করে নিষেধাজ্ঞা। তবে জীবন জীবিকা সচল রাখার অনিবার্য প্রয়োজনে মানুষ তাতে তেমন সাড়া দেয়নি। দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন ব্যতিরেকে সবই চলেছে। হাটবাজার, মার্কেটগুলো ছিল খোলা। এ সময় কোথাও স্বাস্থ্যবিধি তথা ১৮ দফা নির্দেশনা মানার বালাই পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। এমতাবস্থায় সরকার দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এ সময় সবকিছু বন্ধ থাকবে জরুরী সেবাসমূহ ব্যতিরেকে। তবে দেশের শিল্প কলকারখানা, আমদানি ও রফতানি চলবে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশের কলকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচল রাখা কতটা সম্ভব হবে এবং আক্রান্ত শ্রমজীবীদের চিকিৎসার বিষয়টি কি হবে তা সুস্পষ্ট নয়। এবার লকডাউন মানার জন্য জারি হয়েছে ১৩ দফা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা একে দ্বিতীয় ঢেউ বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট। এমনকি আইসিইউ বেড পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠেছে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য। দেশে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও শুরু হয়েছে। করোনায় বহির্বিশ্বের পরিস্থিতিও সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হয়েছে সরকার। সবার মুখে মাস্ক পরাসহ সাবান-স্যানিটাইজার ব্যবহার সর্বোপরি ১৩ দফা স্বাস্থ্যবিধি মানা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এসব বাস্তবায়ন করতে মাঠে নামছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রয়োজনে আইন করে জেল-জরিমানা করার বিধানও কার্যকর হচ্ছে। চলতি গ্রীষ্মে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের আশঙ্কাকে সামনে রেখে আবারও সবাইকে মুখে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন থেকে ঘরের বাইরে গেলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এমনকি মসজিদ-মন্দির-দুর্গাপূজা, রোজা-ঈদ উৎসব, জনসমাবেশ, হাটবাজার, যানবাহনÑ প্রায় সর্বত্রই মাস্ক পরতে হবে ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। মাস্ক না পরলে জরিমানা অর্থাৎ অর্থদ- করা হবে। মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সুতরাং সর্বাত্মক প্রতিরোধ ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে সবখানে, সর্বত্র। সরকার গত জুলাই মাস থেকে মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও পরে তাতে শৈথিল্য দেখা দেয়। নাগরিকদের মধ্যে প্রায় সর্বত্র গাছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। এমতাবস্থায় সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে। মাস্কও এখন সস্তা ও সুলভ হয়েছে। তাই মাস্ক ব্যবহারে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও সংক্রমণ এড়াতে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এখন থেকে প্রত্যেক নাগরিককে ঘরের বাইরে যেতে হলে মুখে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তা তিনি অফিস-আদালত, হাট-বাজার, সুপারশপ-সুপার মার্কেটসহ যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান- যেমন বিয়েশাদি যেখানেই যান না কেন। এর পাশাপাশি সবাইকে মেনে চলতে হবে ১৩ দফা স্বাস্থ্যবিধি।
Leave a Reply