‘উৎসবের আমেজ নেই, ভিন্ন পরিবেশে রমজান’- একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম। পয়লা রমজান থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের কিছুকাল আগে থেকেই আমরা দেখছি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় সবকিছু এলোমেলো। সর্বাত্মক লকডাউন পরিস্থিতিতে ভিন্ন এক পরিবেশে পার হচ্ছে রোজা। আগের মতো নেই কোন উৎসবের আমেজ। ইফতার বাজারেও বাহারি খাবার কিনতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। মসজিদগুলোতে ২০ জনের বেশি মুসল্লির নামাজ আদায় করার সুযোগ না থাকায় এবার ঘরে ঘরে হচ্ছে তারাবিসহ বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজ। এভাবেই বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ঘরবন্দী রোজার রোজনামচা। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বাণী নিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে আবারও উপস্থিত পবিত্র রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ তিন ধাপে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবে। সারা বছর জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে তারা যে পাপ করেছে, তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার মোক্ষম মাস হলো রমজান। সিয়াম সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তারা নাজাতের পথ খুঁজবে। হাজার রজনীর শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ রাতেই রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। কুরআনের শিক্ষা হলো বিশ্বাসী মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে অশেষ কল্যাণ দান করা। কৃচ্ছ্রসাধন ও আত্মসংযমের এ মাসে তাই সংসারী মানুষ আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার ওয়াদা করে। তাদের সবরকম গুনাহ্ মাফ করে দেয়ার আকুল প্রার্থনা জানায়। এ মাসে আল্লাহ তার বান্দাদের কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। এবার করোনা পরিস্থিতিতে রমজানে তারাবির নামাজে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি ওয়াক্তে খতিব, ইমাম, হাফেজ, মুয়াজ্জিন ও খাদেমসহ সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এছাড়া জুমার নামাজে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নিতে বলা হয়েছে। সবাইকে এ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানের উচিত করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহতায়ালার দরবারে মোনাজাত করা। মহান আল্লাহ আমাদের এই বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন। চিরাচরিত রীতি অনুসারে রোজা শুরু মানেই ঈদের প্রস্তুতি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যে যার সাধ্যমতো কেনাকাটার কাজ শুরু করে আগেভাগেই। কিন্তু এবার ভয়ঙ্কর করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে মার্কেট ও শপিংমলগুলো রয়েছে বন্ধ। যে কারণে এবার এখন পর্যন্ত কেনাকাটার কোন সুযোগ প্রায় নেই। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সবচেয়ে কষ্টে আছে দরিদ্র মানুষ। গরিব-দুঃখীদের বিপদে সহায়তা করা রমজানের শিক্ষা। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দায়িত্ব রয়েছে গরিবদের পাশে এসে দাঁড়ানোর। এ পবিত্র মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। পবিত্র মাসে স্বস্তির সন্ধানে ইবাদতের বিকল্প নেই। বিপন্ন মানুষের কল্যাণে ব্রত হওয়াও বড় ইবাদত- এ কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।
Leave a Reply