বিশ্বে করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে যে কোনো দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাফল্যের অন্যান্য স্তর দ্রুততম সময়ে অতিক্রম করার সক্ষমতা অর্জনও জরুরি হয়ে পড়েছে। দুঃখজনক হলো, দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়। লক্ষ করা যায়, কোনো কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে, ব্যয় বাড়ে; কিন্তু তারপরও সময়মতো কাজ শেষ হয় না। এতে প্রকল্প প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও জবাবদিহির বিষয়গুলো বারবার আলোচনায় আসে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গাফিলতি ও উদাসীনতার এই ধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন না এলে দেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রবল ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা যে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২২ বছরেও শেষ হয়নি সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্কের কাজ। শুধু সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্কই নয়, বিভিন্ন অর্থবছরে নেওয়া ছয় শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উন্নয়নের নামে নেওয়া প্রকল্পগুলো ঝুলে আছে বছরের পর বছর। যথাসময়ে কাজ শুরু হলেও শেষ হচ্ছে না। বছর যাচ্ছে, মেয়াদ বাড়ছে, সঙ্গে ব্যয়ও; দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। বস্তুত প্রকল্প প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে সংশ্লিষ্টদের প্রকৃত জবাবদিহির অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, এমনই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কোনো প্রকল্প তৈরির সময় সম্ভাব্যতা, ডিজাইনসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় সঠিকভাবে যাচাই করা না হলেই বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক তদারকির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ বছরের পর বছর ঝুলে থাকতে দেখা যায়। কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে কেবল যে ব্যয় বাড়ে তাই নয়; জনগণ এর সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। কোনো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় জনদুর্ভোগও সৃষ্টি হয়। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে জনগণকে দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়। জানা গেছে, ১২ বছর ধরে চলছে তিন প্রকল্পের কাজ, ১১ বছর ধরে চলছে পাঁচ প্রকল্পের কাজ এবং ১০ বছর ধরে চলছে সাত প্রকল্পের কাজ। এছাড়া আরও বিভিন্ন মেয়াদে চলছে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ। লক্ষ করা যায়, প্রকল্প নেওয়ার সময় সংশ্লিষ্টদের যতটা আগ্রহ থাকে, পরে তা আর থাকে না। কারণ প্রকল্প থেকে বিভিন্ন কেনাকাটা শেষ হলে তখন অন্য বিষয়ে আগ্রহ বাড়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের। যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোর প্রস্তাব সংশোধন সাপেক্ষে অর্থছাড় করা হলেও যথাযথ তদারকি না থাকলে প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন নতুন জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যায়। বস্তুত প্রকল্পবিষয়ক সমগ্র কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাতে কোনোরকম অনিয়ম না ঘটে এটা নিশ্চিত করা না হলেই তা বাস্তবায়নে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। ঠিকাদার নির্বাচনে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, অভিজ্ঞতাসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় যাচাই করা হলে ঝুঁকি অনেক কমে। কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি দূর করা না গেলে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি হওয়া প্রয়োজন।
Leave a Reply