বাউফল প্রতিবেদক ॥ ‘শ্রমিকগো মেসে রান্নাবান্না করতাম। সবাই ৫শ’ কইরগ্যা দিতে। থাকইক্কা খাইয়া হাজার চাইরেক অইতে। অইয়াই বাড়িতে দিতাম। করোনায় মেস বন্ধ অওনে বাড়িতে আইয়া আর কোন কাজ-কাম নাই। স্ত্রী-সন্তান লইয়া কোন বেলা খাই, কোন বেলা জোডে না।’ Ñ দীর্ঘদিন থেকে রাজধানী পুরান ঢাকার মালিটোলা ক্লাব সংলগ্ন মসজিদ এলাকার জনৈক রিয়াজ নামে একজনের বাড়িতে অবস্থান করে সেখানকার দিন আয়ের শ্রমিকদের মেসের রান্নাবান্নার কাজের উপার্জনে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের ঘরসংসার পরিচালনা করে আসলেও করোনায় কর্মহীন হয়ে পটুয়াখালীর বাউফলের ধানদী গ্রামের আব্দুল হাওলাদার এভাবেই বললেন তার খেয়ে না খেয়ে চলা নিদারুন দূরাবস্থার কথা।
হতদরিদ্র পরিবারে ছোটবেলা থেকে খেয়ে না খেয়ে বেড়ে ওঠার দু:খ-কস্ট ভুলতে প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমানো সহজ-সরল প্রকৃতির গ্রামের মৃত. ধলু হাওলাদারে ছেলে পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল জানান, গ্রামে থাকতে স্থানীয়দের অনেকেরই ফুট-ফরমাশ খেটেছেন তিনি। এখন সমাজে ভাল অবস্থানে আছেন তাদের অনেকেরই উপকার করেছেন নানা ভাবে। থানা সদরে পরীক্ষার হল হওয়ায় গ্রাম থেকে সেখানে অবস্থান করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেক ছাত্রছাত্রীর (উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বর্তমানে সমাজে নানা ভাবে নেতৃত্ব ও ভূমিকা রাখা) জন্য কর্দমাক্ত রাস্তা হেটে টিফিনক্যারিয়ারে ভাত টেনে খাইয়েছেন। জীবনে রক্ত-ঘাম ঝড়িয়েছেন বিভিন্ন জনের কাজে গিয়ে বিপদে-আপদে। কিন্তু এখন করোনার মহামারির মতো বিপাকে পড়ে কর্মহীন হয়ে ভালভাবে দু’বেলা ভাত জোটে না তার। বড় মেয়ের সালমার বিয়ে দিয়েছেন কয়েকজনের সহোগোগিতায়। দারিদ্রতার কারণে পড়াশুনায় এগোয়নি বড় ছেলের। এসময় ঠিকমতো খাবারদাবার না জোটলে স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুল পড়–য়া ছোট ছেলেটাকে নিয়ে যায় তার নানা বাড়ির লোকজন। ঢাকায় থাকা কালিন সময় কোনমতে চললেও স্ত্রী, সন্তান নিয়ে পাঁচ জনের সংসার এখন আর চলছে না তার। লকডাউনে শ্রমিকরা মেস ছেড়ে দেয়ায় বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরতে হয়েছে তাকে। খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছেন তিনি সেখানে মেসে এখনও শ্রমিকরা ওঠেননি। পরিচিত কারো মাধ্যমে অন্য কোথাও মিলছে না আর কাজের সন্ধান। শারীরিক গঠনের কারণে কঠিন পরিশ্রমের কোন কাজে যুক্ত হওয়া সম্ভব না হলেও মিলছেনা তাও।
তিনি আরো জানান, করেনায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে তার মতো নি¤œ আয়ের লোকজনের জীবন-জীবিকায়। স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণ হলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার মাধ্যমে একবার ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মাধ্যমে একবার সরকারি ত্রাণ সাহায্য পেলেও তা যথেস্ট নয়। অনেকটা সহজ-সরল প্রকৃতির হওয়ায় ধার-দেনা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কোনমতে দু’বেলা খেয়েপড়ে বেঁচে থাকাই অনেকটা দায় হয়েছে। দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকার কারণে বিজিডি, ভিজিএফের মতো স্থায়ী কোন সরকারি সাহায্য তালিকাতেও নাম নেই তার। তিনি বলেন, ‘কোন বেলা খাই, কোন বেলা জোডে না। মাইনষের কাছে আত (হাত) পাইত্যা চাইয়া চলছি। আর পারি না।’
Leave a Reply