দখিনের খবর ডেস্ক ॥ পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ব্যয় ও সময় আবারও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হবে। জানা গেছে, প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ২ বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
‘পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধাদির উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৫ সালে। ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে তা বাস্তাবয়ন করার কথা ছিল। ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ানো হয় ১৯৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। অনুমোদিত ব্যয় ছিল এক হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। দুই হাজার ২২২ কোটি ৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সময়ও বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় আবারও বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোরও আবদার করা হয়েছে। ফলে মূল প্রকল্প থেকে সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। সময় বাড়ছে ৪ বছর। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। মূল প্রকল্পে ৬ হাজার ৫৬২ দশমিক ২৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১ হাজার ২২ কোটি টাকার সংস্থান ছিল। ২০১৭ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ তিনগুণ হারে নির্ধারিত হওয়ায় এ খাতে ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বাড়ছে। ফলে অধিগ্রহণ বাবদ মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ভূমি অধিগ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ভূমি অধিগ্রহণ জুন ২০২০ এর মধ্যে সম্পন্ন হবে না বিধায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও জুন ২০২০ এর মধ্যে সম্পন্ন হবে না। ফলে প্রশিক্ষণের মেয়াদ আরও ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অনুমোদিত প্রকল্পের সংস্থান অনুযায়ী পুনর্বাসন কাজ ১৪টি প্যাকেজে ভাগ করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যাদি যেমন বালু ভরাট, নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বৃষ্টি প্রবণ এলাকা এবং জমি হস্তান্তরে বিলম্ব ইত্যাদি কারণে পুনর্বাসন কাজ সময়মত সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না। সে পরিপ্রেক্ষিতেই প্রকল্পের সময়-ব্যয় আবারো বাড়ছে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আশিক আলী বাংলানিউজকে বলেন, “মূলত ভূমি অধিগ্রহণের কারণেই প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ছে। ২০১৭ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ তিনগুণ হারে নির্ধারিত হয়েছে। ফলে এই খাতে ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া প্রশিক্ষণের বিষয়ে জটিলতার কারণেও ব্যয়-সময় বাড়ছে। ” নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে প্রস্তাবিত পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরটি অবস্থিত। এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারমূলক ফার্স্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ অ্যাক্ট-২০১৩ অনুমোদিত হয় এবং ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। তৃতীয় এ সমুদ্রবন্দরটি প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর উদ্বোধন করেন। বর্তমানে ১৬ একর জায়গার উপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদি যেমন- পন্টুন, ক্রেইন, নিরাপত্তা ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা হলেও এখনও পণ্য ওঠা-নামা খালাস করা হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর ব্যবস্থা গড়ে ওঠা না পর্যন্ত বহির্নোঙরে বাণিজ্যিক জাহাজ আনয়নের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, “প্রকল্পটি মঙ্গলবার একনেক সভায় উপস্থান করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।
Leave a Reply