নগরীতে জলাবদ্ধতা আমাদের দেশের পুরনো সমস্যা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হয় এবং বড় বড় বাজেটের কাজও হয়। দেশের দুই প্রধান নগরী ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য বারবার বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দুই নগরীর করপোরেশন এবং ওয়াসা এ বিষয়ে বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি নিয়োগ করে বিদেশি সহায়তায় মেগাপ্রকল্পও বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল কখনো পাওয়া যায়নি। বলা বাহুল্য হলেও বলতে হয়, প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও বাজেট বৃদ্ধির ঘটনা ছিল সাধারণ বাস্তবতা। এটাও হয়তো না বললে চলে যে, এসব উন্নয়ন প্রকল্প অনেকের বাড়তি ও অবৈধ উপার্জনের পথ খুলে দেয়। এ নিয়ে দুর্নীতি ও অদক্ষতার বিস্তর অভিযোগ উঠলেও একই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এ বছরও যথারীতি দুই নগরীতেই বর্ষার শুরুতেই জলাবদ্ধতার সংকট ফিরে এসেছে। গণমাধ্যমও যথারীতি এ নিয়ে হইচই করছে, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাও নিয়মমাফিক সংকটের নতুন কোনো ব্যাখ্যা হাজির করছে এবং সরকারও প্রতিবারের মতো নাগরিকদের আশ্বাস বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে।
সরকার, বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের নিয়মিত কৃত্য নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। বাস্তবায়ন পর্যায়ের দুর্নীতি, অদক্ষতাও পুরনো বিষয়। এখন নতুনভাবে বলা দরকার, এই ক্রনিক সমস্যাটি নিয়ে নতুন সৃজনশীল ভাবনার প্রয়োজন। একটি সহজ কথা হলো, নিরক্ষীয় অঞ্চলের ভারী বর্ষণের ফলে যে কোনো নগরীতেই উন্নত, উন্নয়নশীল বা অনুন্নতÑ যে কোনো দেশের হোক না কেন, পানি জমবে। কথা হচ্ছেÑ ওই জমা পানি বৃষ্টি থামার পর দ্রুত যাতে সরে যায়, এর ব্যবস্থা করাটাই আসল কাজ। বৃষ্টির মধ্যে জলাবদ্ধতা নিয়ে এখন যে হইচই হয়ে থাকে, তা বন্ধ হবেÑ যদি মানুষ দেখতে পায় বৃষ্টি থামলেই পানি নেমে যায় বা ওয়াসা কিংবা করপোরেশনের লোক এসে ড্রেনের মুখ পরিষ্কার করে পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কিন্তু তেমনটি ঘটছে না বা ঘটতে পারছে না। এর কারণ হলো, দুই নগরীই পাল্লা দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে চলেছে। নাগরিকরা হয়তো রাজউক বা চউকের দুর্নীতি ও শৈথিল্যের সুযোগে বাড়িঘর তৈরি করছেন। কোথাও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে, কোথাও বর্তমান পয়ঃনিষ্কাশনের নালা বন্ধ করেই এমন ব্যক্তিগত উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া একা সরকার বা সরকারি সংস্থার পক্ষে এ ক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। আমরা দুর্নীতি ও অদক্ষতার পাশাপাশি বা এ দুই কারণ ছাড়াও নাগরিকদের ভূমিকার জন্যই সফল হচ্ছি না। নাগরিকরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সৎ ও আন্তরিক হলে সংকটের এই বিষচক্র ভাঙার মতো সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা সম্ভব হতো। আমরা ওই রকম দিনের অপেক্ষায় থাকব। আশা করব, সরকার এ বিষয়ে সচেতন হয়ে উদ্যোগ নেবে এবং নিজেদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সঠিক পথে চলার জন্য নির্দেশনা দেবে ও সততার সঙ্গে তাদের কাজ তদারক করবে।
Leave a Reply