বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ু। শীতপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত কানাডায় গত সপ্তাহে তাপপ্রবাহের কারণে মৃত্যু হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির। হাসপাতালে গেছে আরো কয়েক শ মানুষ। মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে বিজ্ঞানীদের অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে। সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। ভানুয়াতুর মতো অনেক দ্বীপদেশ প্রায় তলিয়ে গেছে বা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেরও উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল নোনা পানিতে ক্রমেই বেশি করে তলিয়ে যাচ্ছে। চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ঝড়ঝঞ্ঝা-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দুনিয়াব্যাপী বাড়ছে রোগব্যাধির প্রকোপ। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ফিরে আসছে নতুন শক্তি নিয়ে। মশাসহ পানিতে জন্ম নেওয়া কীটপতঙ্গের আক্রমণে অনেক রোগের বিস্তার ঘটছে ব্যাপক আকারে। রোগের ধরন, গতি-প্রকৃতিও বদলে যাচ্ছে। এসব রোগের চিকিৎসাও ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, যত দিন যাবে পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে যাবে। তাই এসব মোকাবেলায় দ্রুত প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
দেড় দশক আগে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামি ৫০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। তার অর্থ আর তিন বা সাড়ে তিন দশক পর বাংলাদেশে তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু? নেই বললেই চলে। ২০১৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেসিলিয়েন্স ফান্ডের (বিসিসিআরএফ) আওতায় আগের ছয় বছরে ২৩৬টি সরকারি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৮৪টি প্রকল্পের ৩৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৮৫টি প্রকল্প ২০০৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ হয়েছিল মাত্র ২০ শতাংশ। অথচ এই ফান্ডের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ বিপর্যয় মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতিমূলক কাজে এমন অবহেলাকে আত্মঘাতী উদাসীনতা ছাড়া আর কী বলা যাবে?
প্রতিবছরই দেশে বন্যার ঘটনা ঘটছে। দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। জোয়ারের পানি এখন ক্রমেই বেশি এলাকা ডুবিয়ে দিচ্ছে। উপকূলীয় অনেক শহরও এখন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ডায়রিয়াসহ আরো অনেক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগগুলো মোকাবেলার জন্য আলাদা বা বিশেষ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। নিয়মমাফিক তথ্য সংগ্রহ বা গবেষণার কাজগুলোও ঠিকমতো করা হচ্ছে না। এমন আত্মঘাতী উদাসীনতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আগামি প্রজন্মকে চরম নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না।
Leave a Reply