দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপিত হচ্ছে রূপপুরে। প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। প্রথম চুল্লির কাজও শেষ দিকে। শনিবার দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রথম ইউনিটে ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটে ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। দুই ইউনিট মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে পেরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আশা করেন, ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মানুষের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় এক হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা সূচকে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। প্রচুর কর্মসংস্থান দরকার। আর সেই বিনিয়োগের প্রধান শর্ত হলো পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে চলেছে। ফলে এরইমধ্যে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এই চাহিদা ৩০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সফলভাবে সে কাজটি করে চলেছে। এ ক্ষেত্রে পরমাণু-বিদ্যুতের সুবিধা সবচেয়ে বেশি। এর প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি হলেও প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক কম। পরিবেশদূষণ নেই বললেই চলে। গত অর্ধশতাব্দীতে প্রথম প্রজন্মের দুয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটলেও পরবর্তী সময় দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মের কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির হওয়ায় এখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশকে নিকট-ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতাযুদ্ধে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সক্রিয় সহযোগিতা ও তাদের নাগরিকদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন। পাকিস্তানকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তৎক্ষণাৎ সোভিয়েত নৌবহর যাত্রা শুরু করে। মাঝপথে থেমে যায় সপ্তম নৌবহর। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্য রকমও হতে পারত। হয়তো আরো বহু লাখ মানুষের জীবন যেত। স্বাধীনতার পরও বন্দরগুলোতে পাকিস্তানের পুঁতে রাখা মাইন পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক সোভিয়েত নৌসেনা জীবন দিয়েছেন। সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান দেশ রাশিয়াকে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে পাওয়া আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাক। বাংলাদেশ ক্রমেই উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যাক।
Leave a Reply