বাংলাদেশে শুধু পরিবেশদূষণের কারণে সৃষ্ট নানা রোগে বছরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই হিসাব উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক গবেষণায়। এ ছাড়া প্রতিবছর আক্রান্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। মারা না গেলেও রোগ-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় বহু মানুষকে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে গেছে। তার পরও কি আমাদের হুঁশ ফিরছে? পরিবেশ ও বন রক্ষায় আমরা কি সামান্যতম আন্তরিকতা দেখাচ্ছি? সারা দেশেই অবাধে ধ্বংস হচ্ছে বন। বনের পাশে, এমনকি বনের মধ্যেও গড়ে উঠছে দেদার করাতকল, ইটভাটা, কাঠ পোড়ানোর নানা ধরনের চুল্লি। প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধু মির্জাপুরেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ও তার আশপাশে ৩৩টি চুল্লি রয়েছে, যেগুলোতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়। আবার বনের জমি দখল করে বানানো হচ্ছে ঘরবাড়ি বা অন্যান্য স্থাপনা। যে বন বিভাগ এসব দেখভাল বা রক্ষা করার দায়িত্বে রয়েছে বাস্তবে দেখা যায় তাদেরই কিছু কর্মী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বন ধ্বংসকারী বা দখলকারীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে।
সুস্থ পরিবেশের জন্য কোনো দেশে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা জরুরি। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ আরো অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এভাবে চললে কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ বনশূন্য হয়ে যাবে। পঞ্চাশের দশকেও মধুপুর বনাঞ্চলে বাঘের অবাধ বিচরণ ছিল। ছিল বুনো মোষ, গয়ালসহ আরো অনেক বন্য প্রাণী। স্বাধীনতার পরও ভাওয়াল-মধুপুরে বনের যে বিস্তৃতি ছিল, বন যতটা গহিন ছিল তার প্রায় কিছুই নেই এখন। অতি সামান্য যেটুকু অবশেষ কোনো রকমে টিকে আছে, তা-ও এভাবে শেষ হয়ে যাবে? কয়েক বছর আগের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধু কক্সবাজার জেলায়ই সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোর পাশে বা কোথাও কোথাও বনের পেটের মধ্যে প্রায় দুই ডজন ইটভাটা ছিল। এখন সম্ভবত সংখ্যা আরো বেড়েছে। অভিযোগ আছে, এদের বেশির ভাগই দেখানোর জন্য ভাটায় কিছু কয়লা জমিয়ে রাখে, কিন্তু ইট পোড়ায় কাঠ দিয়ে। পাহাড় কেটে মাটি নেয়। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটে বনাঞ্চলের পাশে এ রকম কয়েক শ ইটভাটা পাওয়া যাবে। অথচ আইনে আছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানার তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকতে পারবে না। কিন্তু আইন বাস্তবায়ন করবে কে? বাস্তবায়নের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কোনো না কোনো কারণে এ ক্ষেত্রে তাঁদের চোখ বন্ধ করে রাখেন।
সুস্থ জীবনের জন্য সুস্থ পরিবেশের কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই, মির্জাপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে যেসব চুল্লি ও কারখানা গড়ে উঠেছে, অবিলম্বে সেগুলো বন্ধ করা হোক। যারা অন্যায়ভাবে সেগুলো করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সঙ্গে বন ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা কেন এতদিন সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি, তা তদন্ত করে প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
Leave a Reply