বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মেরিন একডেমিতে ৫৫ ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে তিনি সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মেরিন গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী আলোকপাত করে বলেন, ‘আমাদের ক্যাডেটরা নতুন জীবনে পদার্পণ করবেন, তাদের সততা, দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। মনে রাখতে হবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’ মেরিটাইম নেশন বা উপকূলবর্তী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। বিশ্বব্যাপী সমুদ্রকে সম্পদের উৎস বা বিকাশের স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সমুদ্র থেকে আহরিত খাদ্য, জ্বালানি, খনিজসম্পদ, ওষুধ প্রস্তুতের উপাদান ইত্যাদি সম্পূরক সম্পদ দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার বিস্তৃৃত উপকূল এবং দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের (১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার) সমান সমুদ্র এলাকা। বাংলাদেশের বিস্তৃৃত সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রসম্পদ আহরণ এবং তার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সমুদ্রপথেই পরিবহন করা হয়। বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার পরিবহনের প্রায় ৬৪ শতাংশ এশিয়া মহাদেশে পরিবহন করা হয়। বৃহত্তর পরিসরে সমুদ্র পরিবহন বাণিজ্যের যথাযথ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত এবং প্রতি বছর প্রায় ১৫% হারে বিকাশমান এ বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবশ্যই আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। আশার কথা মেরিন একাডেমির প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেট দেশে ও বিদেশের সমুদ্রগামী জাহাজে সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছর আয় করে দেশে আনছে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনাকালেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। সারাবিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষের অর্থনীতি, জীবিকাসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে উপসাগর, সাগর, মহাসাগর এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার নদ-নদী ও হ্রদ। মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, আয়-রোজগার, ঔষধি উপাদান, প্রোটিন ও পুষ্টির উৎস, পর্যটন ও পরিভ্রমণ, পণ্য পরিবহন ছাড়াও সমগ্র অর্থনীতির বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে নদী, সাগর ও তার সুবিশাল অববাহিকা। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে উপকূল, চর ও দ্বীপ, ব-দ্বীপ এবং উপদ্বীপ, যা সমগ্র দেশ ও জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের সোপান। সুবিশাল বঙ্গোপসাগরকে এক পাশে রেখে জালের মতো ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য নদীঘেরা বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ার মধ্যে স্বতন্ত্র ও ভিন্নতর। সার্বিক উন্নয়নের জন্য মেরিন সংক্রান্ত জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। মেরিন একাডেমির উন্নয়নে বর্তমান সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একাডেমির নটিক্যাল প্রশিক্ষণকে উন্নততর করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে একাডেমিতে স্থাপন করা হয়েছে ‘নেভিগেশন সিমুলেটর’। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬৫ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একাডেমির পতেঙ্গা প্রান্তে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথ নির্মাণ, দুটি প্রশিক্ষণ বোটের কমিশনিং এবং পোস্ট-সি ক্যাডেট বণ্টকের নবায়ন। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য মার্চেন্ট নেভি ট্রেনিং বোর্ডের স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে এবং যুক্তরাজ্য মেরিটাইম এ্যান্ড কোস্টগার্ড এজেন্সির স্বীকৃতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাডেমির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আরও বৃদ্ধি পাবে। আগামীতে সমুদ্রচারণে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেরিন ক্যাডেটরা দেশের সুনাম বয়ে আনবে বলেই প্রত্যাশা।
Leave a Reply