হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ছিল গতকাল। এবারের জন্মদিন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও অভূতপূর্ব। এবার বাঙালীর এই অবিসংবাদিত নেতার জন্মশতবর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণ অতিক্রান্ত। জাতি সানন্দচিত্তে তাঁর ১০১তম জন্মদিন উদযাপন করছে। অবশ্য এই উৎসবের আড়ম্বর অনেকটাই সীমিত করে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে। জনকল্যাণকামী সরকার গত বছর জাতির পিতার বর্ণাঢ্য জন্মশতবর্ষের বর্ণিল আয়োজন সীমিতভাবে উদ্যাপন করেছে। তবে গণমাধ্যমগুলো দিবসটির মহিমা ও তাৎপর্য তুলে ধরেছে নানা আঙ্গিকে। সংবাদপত্রসমূহ প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র, টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করছে নানামাত্রিক অনুষ্ঠান। এবারও এসবের ব্যতিক্রম হবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এবার ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ ১০ দিনব্যাপী নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আসছেন অন্তত পাঁচটি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। এতে করে বাংলাদেশের প্রতি দেশগুলোর আস্থারই প্রতিফলন ঘটেছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে সীমিত পরিসরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তবে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হবে নানা ভার্চুয়াল মাধ্যমে। একজন নেতা তাঁর দেশের মানুষকে মর্যাদাপূর্ণ আত্মপরিচয়ের আলোকে কী অপরিসীম সাহসিকতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তার উজ্জ্বল উদাহরণ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের সর্বস্তরের মানুষ তথা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ভালবাসা, হৃদয় উজাড় করা শ্রদ্ধা ও সম্মানে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। সমগ্র দেশের মানুষ অকৃত্রিম ভালবাসার কারণে, বিশ্বাসের কারণে তাঁর ওপর অর্পণ করে পূর্ণ আস্থা, তাঁকে স্থান দেয় তাদের হৃদয়ে। গতকাল এই দিনে আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এই মহান নেতাকে। স্মরণ করি তাঁর কাজ, তাঁর আদর্শকে। তিনি এদেশে জন্মেছিলেন, এ দেশের মানুষকে ভালবেসেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, এটা আমাদের পরম সৌভাগ্যের। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চারণের মতো সারাদেশ ঘুরে মানুষকে জাগিয়েছেন। পাকিস্তানী স্বৈরাচারী সামরিক শাসকদের জেলে বছরের পর বছর বন্দী থেকেও অকুতোভয় বীরের মতো নিজ সঙ্কল্পে অটল থেকেছেন। মুক্তির মহামন্ত্রে জাতিকে জাগিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পথ ধরে জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বপ্ন পূরণের চূড়ান্ত লক্ষ্যে- এ কৃতিত্ব একান্তভাবে তাঁরই। তিনিই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার এবং প্রতিষ্ঠাতা। পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি সব সময় উর্ধে তুলে ধরেছেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ। সত্তরের নির্বাচনে জাতির অবিসংবাদিত নেতারূপে তিনি অভিষিক্ত হন। গোটা জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন। শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন। দেশের মানুষকে তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার মন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ করেন। এরই একপর্যায়ে আসে মহান একাত্তরের ৭ মার্চ। সেদিন ঢাকার ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে তিনি যে ভাষণ দেন সেটাও হয়ে ওঠে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অত্যুজ্জ্বল মাইলফলক। তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। তিনিই তাঁর নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতার স্বর্ণ তোরণে। গতকাল সেই মহান নেতার শুভ জন্মদিন। এই দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা তাঁর রেখে যাওয়া দলের নেতৃত্বেই বর্তমান সরকার টানা চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনা করছে জনগণের সমর্থনে। আমরা মনে করি, সরকারের সামনে প্রধান কাজটিই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
Leave a Reply