৩০ লাখ শহীদ আর কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা আজ তার সুবর্ণজয়ন্তীর স্বর্ণদ্বারে। ত্যাগ-তিতিক্ষা আর লাখো মুক্তিযোদ্ধার সম্মুখ সমরে লড়াই ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। যুদ্ধাহত বেঁচে থাকা মুক্তি সংগ্রামীরা আজও জাতির অহঙ্কার। প্রতিবছর অগ্নিঝরা মার্চের রক্তস্নাত পর্বগুলো নতুনভাবে শাণিত হয়ে মুক্তির প্রেরণাকে নবোদ্যমে জাগিয়ে তোলে। ক্ষত-বিক্ষত আর পঙ্গুত্ব বরণ করা অনেক অসহায় মুক্তিযোদ্ধা আজও মানবেতর জীবনযাপনে সময় পার করছেন। দেখতে দেখতে স্বাধীনতা ৫০ বছর অতিক্রমের দ্বারপ্রান্তে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাযজ্ঞ বাংলার ইতিহাসের এক কলঙ্কিত পর্যায়। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর অস্তিত্ব সঙ্কটের হুমকিতে পড়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও নানামাত্রিকে সমূহ বিপর্যয়কে সামলাতে হয়। যাপিত জীবনের টানাপোড়েনে প্রতিদিনের দুর্ভোগ বয়ে বেড়ানো নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সুবর্ণজয়ন্তীর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণের, যা প্রবল আশার সঞ্চার করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দীর্ঘদিনের জঞ্জাল খুব বেশি তাড়াতাড়ি উপড়ে ফেলতে পারেননি। ফলে অপেক্ষমাণ জাতিকে আরও প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হয়। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার শাসনকাল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক আলোকিত পর্ব। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে সমৃদ্ধির গতিধারা প্রবহমান করতে তাকে আরও কয়েক বছর পার করতে হয়। ততদিনে জনসাধারণের ৫টি মৌলিক অধিকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরন্তর সামনের দিকে ধাবিত হয়। উন্নয়ন দশক পার হয়ে যুগপূর্তির মহাসন্ধিক্ষণে বাংলাদেশে পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য নজিরই শুধু নয়, রোল মডেলও। করোনার চরম দুঃসময়ে থমকে যাওয়া অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় নেয়নি। গতিশীলতায় মেগা প্রকল্পগুলোও নির্ধারিত খাতকে গন্তব্যে নেয়ার চিত্র ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কর্মদ্যোতনার সিংহভাগ জুড়ে থাকে। প্রবৃদ্ধির গতিধারায় এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার সময়োপযোগী উন্নয়ন ধারা কেবলই আলোর মুখ দেখিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে নজর দিলেন বেঁচে থাকা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে। একনেকের নিয়মিত সভায় তাদের জন্য বীর নিবাসস্থল গড়ে দিতে অনুমোদন দিয়েছেন। এটি ৫০ বছর পূর্তিতে অবিশ্বাস্য উপহার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। একেবারে সহায় সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধার সঠিক সংখ্যা জানা নেই বললেই চলে। মুক্তিযোদ্ধারা মাসিক ভাতা পান সরকারের কাছ থেকে। তাদের অবর্তমানে পরিবারের কাছে সে ভাতা চলেও যায়। তার পরেও দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামী থাকতে পারেন। তাদের সন্ধান পেলে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের খাস জমি বন্দোবস্ত করে বীর নিবাস তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দ্রুততার সঙ্গে এই মহান প্রকল্প বাস্তবায়নেরও পরামর্শ দেন সরকারপ্রধানের। মূলত আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দের কথা থাকলেও জরুরী ভিত্তিতে কর্ম প্রকল্প এগিয়ে নিতে চলতি অর্থবছর থেকে টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন। গ্রামগঞ্জের অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও দেখছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে দীর্ঘসূত্রতার জালে অযথা সময় এবং অর্থ ব্যয় প্রতিহত করতে কঠোর নজরদারিও আবশ্যক। আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাই যাতে এই বীর নিবাসের অংশীদারিত্ব পায়, তা বিবেচনায় রাখা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আবশ্যক দায়বদ্ধতা।
Leave a Reply