করোনার বহুল সংক্রমণে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বছরব্যাপী ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে। ছোঁয়াচে এই মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এক অপরিহার্য শর্ত। সঙ্গত কারণেই অবরুদ্ধতার কঠিন জাল সবার আগে ফেলা হয় জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাকার্যক্রমে। এক বছরের বেশি ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া ছাড়াও পুরো পাঠ্যক্রমের শৃঙ্খলিত বলয়কে কিভাবে তার প্রাসঙ্গিক কর্মযোগে ফিরিয়ে নেয়া যেতে পারে সেটাই এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারত থেকে আমদানি করে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রতিষেধক টিকাটি সারাদেশে সফলভাবে সম্প্রসারিত করতে সচেতন দায়বদ্ধতার পরিচয়ও দিয়েছে। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণও তার গতিকে নিম্নগামী করলে সবার আগে নজর গিয়ে পড়ে জ্ঞানচর্চার এই মুক্ত আলয়টিতে। করোনার দুঃসহ সঙ্কটকাল কিছুটা কাটতে শুরু করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেয়। ঠিক হয় ৩১ মার্চ শিক্ষার্থীরা পুনরায় তাদের পাঠ্যক্রমের শ্রেণীতে প্রবেশ করবে নতুন আশা-আকাক্সক্ষায়। তার আগে সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা অপরিহার্য শর্তের মধ্যেই পড়ে। ফলে এতদিন অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকা পবিত্র শিক্ষালয়টিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কারই শুধু নয়, দূষণমুক্ত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনা হয়। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনার টিকা নেয়াও আবশ্যক হিসেবে নির্দেশনা আসে। সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্কুল-কলেজের দরজা খোলার অপেক্ষায় যখন শিক্ষার্থীরা ঠিক সে সময়ে করোনার ক্রমান্বয় উর্ধগতি সংশ্লিষ্টদের হতাশ ও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। সংক্রমণ বাড়াই শুধু নয়, মৃত্যুর হারও ক্রমান্বয় ওপরের দিকে। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে আদৌ ৩১ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে কিনা। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হয়েছে রোজার ঈদের পর ২৩ মে খুলে দেয়া হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এই মুহূর্তে পাবলিক সার্ভিস কমিশন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের নিয়ে বেশি ভাবছে। পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরাও চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। কারণ করোনার সংক্রমণের গতি যদি উর্ধ হয় তাহলে পরীক্ষার ব্যাপারটিও পিছিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। সংশ্লিষ্টরাও পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানাচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের টিকা নেয়ার পরই পরীক্ষা শুরু করার নির্দেশনাও আসছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের হল খুলে দেয়ার আগেই করোনা ভ্যাকসিন নেয়া বিশেষ দায়বদ্ধতা। পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক বলয় বিশুদ্ধকরণ ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করাও প্রাসঙ্গিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সব কিছু বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ দায়বদ্ধতা। এর অন্যথা হলে সার্বিক পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতে পারে।
Leave a Reply