গত বছরের দিকে ফিরে তাকানো যাক। ২৫ মার্চ প্রথম ঘোষিত হয়েছিল করোনাজনিত ছুটি। প্রথম দফা ছুটি শেষ হওয়ার আগে ছুটি বাড়ানো হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ছুটি বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরই মধ্যে এসেছিল পবিত্র শব-ই-বরাত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে নামাজ পড়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এবারে ফেরা যাক বর্তমানে। গতকাল সোমবার থেকে সরকার আপাতত এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে। ছুটিও ছিল এক ধরনের লকডাউন। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আগের চাইতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। এবার ছুটি না বলে সরাসরি লকডাউনের ঘোষণা এসেছে। এ থেকেই পরিস্থিতির গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে শুক্রবার মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষাস্থল এবং রাজধানীর প্রধান মসজিদে বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েতে করোনাজনিত বিধিবদ্ধ স্বাস্থ্য সতর্কতা লক্ষ্য করা যায়নি। এটি উদ্বেগজনক। যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে, সেটি আর ফেরানো যাবে না। আগামীতে যেন ক্ষতি না বাড়ে সেজন্য সর্বাত্মক লকডাউন সফল করে তোলা চাই। লকডাউন মধুর উপভোগের ছুটি নয়, নয় অবকাশ যাপনের সুবর্ণ সুযোগ। এই লকডাউনের পরতে পরতে রয়েছে উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা। এই ঘরে থাকা সার্বক্ষণিকভাবে কর্তব্য পালনের। এ অবকাশ দায়িত্বশীলতার। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মঙ্গল সাধনের জন্য প্রতিটি দিন সক্রিয়তার, সচেতনতার। অর্থাৎ লকডাউনে কাজ রয়েছে কিছু যা অবশ্য পালনীয়। প্রথম কাজ ঘরে থাকা এবং বার বার হাত ধোয়া। করোনার কোনরকম লক্ষণ প্রকাশ পেলে গণমাধ্যমে প্রতিদিন প্রচারিত ও প্রকাশিত নম্বরে ফোন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা। রোগ লুকিয়ে রাখা অনুচিত। তাতে আশপাশের মানুষ তথা সমাজ বিপদগ্রস্ত হবে। পরিবারের যিনি প্রধান তার দায়িত্ব বেশি। তিনি যথাযথ নির্দেশনা দেবেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আমরা যদি সতর্ক ও সচেতন থাকি, সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি তাহলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভাইরাসটি আমাদের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা গত বছর দফায় দফায় বলেছি, বাধ্যতামূলকভাবে ঘরবন্দি থাকতে হবে দুঃসময়কে রুখে দেয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে। কিছু কথা পুনরাবৃত্তি করা তাই বাঞ্ছনীয়। আগামী এক সপ্তাহ দেশের মানুষ ঘরে অবস্থান করবে। কিন্তু ঘরের বাইরেও যেতে হবে অনেককে জরুরী প্রয়োজনে। নিজেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরও কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সতর্ক ও সচেতন হতে হবে- এই বার্তা সবার সামনে চলে এসেছে। এ মুহূর্তে গণমাধ্যম ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করবে যথানিয়মে। কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব। লকডাউনে সবাই ঘরে থাকবেন নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার স্বার্থে, এটাই প্রত্যাশিত। বাস্তবতা মেনে নিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া থকে নিজেকে সংযত করতে না পারলে সমূহ বিপদ। লকডাউনে ঘরে অবস্থান করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে আমরা করোনার অতি ভয়ঙ্কর বিস্তার ঠেকিয়ে দিতে পারি। লকডাউনে হতদরিদ্র দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের নিদারুণ কষ্ট লাঘবে সরকার কিছু একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এমনটাই প্রত্যাশা। মানুষের বিশ্বাস মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে সক্ষম। যদিও বিশ্বমন্দাকালের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। নিজ দেশের সম্পদ বৃদ্ধি, উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃচ্ছ্রসাধন- দুঃসময়ের এসব বিষয় স্মরণে রেখেই পরিকল্পনা নিতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলেরই গতি ও প্রস্তুতি আবশ্যক।
Leave a Reply