করোনা দুর্যোগে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব বিপন্ন দিশেহারা। গত বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই মহামারীর দাপটে দেশীয় অর্থনীতি থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দার আভাস দৃশ্যমান হয়েছে তাতে বাংলাদেশও আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে ২৬ মার্চ থেকে পরবর্তী এপ্রিল-মে (২০২০) পর্যন্ত অবরুদ্ধতার যে কঠিন জাল বিস্তার করা হয় তাতে অনেকের চাকরি হারানো থেকে শুরু করে দৈনন্দিন রুজি-রোজগারেও এক অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ তৈরি হয়। গত বছরের শেষের দিকে করোনার আকাল কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও চলতি বছরের মার্চ থেকে তা নতুন বৈশিষ্ট্যে আবারও পূর্ণমাত্রায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার দৃশ্য সবাইকে আতঙ্কিতও করে দিচ্ছে। ফলে গতিশীল অর্থনীতির চাকা পুনরায় থমকে যাওয়ার আশঙ্কা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। করোনাকালের বেকার হয়ে যাওয়া অনেকেই এখন অবধি ঘরে বসে অলস ও অবসর সময় কাটাচ্ছেন। সরকার করোনার বিপন্নতায় হরেক রকম প্রণোদনা ছাড়াও খাদ্যপণ্য বিতরণ করাসহ ন্যায্যমূল্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন করে অসহায় দরিদ্র পরিবারে যারা ইতোমধ্যে বেকারত্বের মতো অভিশাপকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে তাদের মধ্যে ৫০০ টাকা করে জনপ্রতি খাদ্য সহায়তা দিতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের এই মানবিক সাহায্য সহযোগিতায় সংশ্লিষ্টদের জীবন মানে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে। প্রতিদিন খেটে খাওয়া যেসব মানুষ বেকার হয়ে দুর্দশায় আছেন তাদেরই এই মানবিক ও যৌক্তিক সহায়তার আওতায় আনা হবে। এর জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ১২১ কোটি টাকা। ২৪ লাখ ২০ হাজার বেকারকে আমলে নেয়া হয়েছে যারা এমন সরকারী সহযোগিতা পেতে পারে। প্রয়োজনে এই সহযোগিতার হাত আরও সম্প্রসারিত করতে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। নতুন করে জারি হওয়া এক সপ্তাহের অবরুদ্ধতা দীর্ঘায়িত হলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১০ কোটি টাকার খাদ্যপণ্য বিতরণ করা সরকারের বিবেচনায় আছে। তবে নতুন কর্মসূচী এককালীন না আরও বেশি সে ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। ৭ কোটি টাকার প্যাকেটজাত খাদ্য এরই মধ্যে কেনা হয়েছে, যা এখন বিতরণের অপেক্ষায়। এ ছাড়া সামনে পবিত্র রমজান এবং ঈদ-উল-ফিতরকে উপলক্ষ করেই ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে ফিডিং কর্মসূচীর আওতায় খাদ্যপণ্যের পরিবর্তে নগদ ৫০০ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। সর্বসাকল্যে ১ কোটি ৯ হাজার লোককে এই অর্থ সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় আনবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এই মানবিক সহায়তা দেয়া হবে ইউনিয়ন পর্যায়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা হতদরিদ্র বেকার মানুষের তালিকা প্রস্তুত করবেন। যারা এই সুবিধার আওতায় আসবেন তাদের প্রত্যেককেই কিউ আর কোড যুক্ত কার্ড প্রদান করা হবে। যাতে সুশৃঙ্খল এই তালিকায় কোন ধরনের অনিয়ম চলতে না পারে। পুরো সাহায্য কর্মসূচী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই কর্মসূচীর আওতায় প্রাসঙ্গিক সব বিষয় ইতোমধ্যে যারা দায়িত্বে থাকবেন তাদের অবহিত করা হয়েছে। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দেয়া হবে জুন মাস পর্যন্ত। ১ কোটি ৯ হাজার পরিবার এই কর্মসূচীর আওতাধীন থাকবে। আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার মৌসুম শুরু হলে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের দৈনন্দিন রুজি-রোজগারের গতি সম্প্রসারিত হবে। সঙ্গে যদি এই ৫০০ টাকা যোগ হয়, তাতে নিত্য জীবন-জীবিকা আরও উন্নত মানের হবে নিশ্চয়ই।
Leave a Reply