উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ডি-এইট-এর দশম শীর্ষ সম্মেলনে সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী দুই বছর তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। বৃহস্পতিবার জোটের বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও সংস্থার বিদায়ী সভাপতি রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ সম্মানের। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা একজন বিশ্বনেতা হিসেবে বহির্বিশ্বে ক্রমান্বয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ডি-৮ দশম শীর্ষ সম্মেলনে (ভার্চুয়াল) সূচনা এবং পরে সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্কের নেতারা। এ বছর শীর্ষ সম্মেলনে সময়োচিত ও দূরদৃষ্টিমূলক মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়- ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে অংশীদারিত্ব : যুবশক্তি ও প্রযুক্তির প্রস্তুতি।’ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী চারটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। সেগুলো হচ্ছে- দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে আমাদের যুবকদের শক্তি বাড়ানো, আইসিটি সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, প্রয়োজনীয় আইনী, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অবকাঠামোগত কাঠামো তৈরি করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুবিধার্থে সংযোগ স্থাপনের উন্নতি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য উত্থাপিত চারটি বিষয়ই বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। বিশ্ববাসী জানে যে, বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন বাঁচিয়ে বিশ্বে এক মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মানবতার জননী হিসেবে তিনি যথাযথ সম্মানও পেয়েছেন। কিন্তু চিরকালের জন্য কোন দেশ শরণার্থীদের দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে না। অবশ্যই এর একটি সমাধান হওয়া চাই। বাংলাদেশ সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার জন্য ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। সঙ্গত কারণেই তিনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই সঙ্কটের সমাধান না হলে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটাও বাস্তবতা যে এই সমস্যা বাংলাদেশের পরিবেশ, সমাজ এবং অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। মুজিববর্ষ উদ্যাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ করেছে। এ ঐতিহাসিক মুহূর্তে ডি-৮-’র পরবর্তী দুই বছরের সভাপতিত্ব লাভ করার মাধ্যমে বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে, এটাই প্রত্যাশিত। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি প্রতিরোধে অভিযোজন এবং প্রশমনের পদক্ষেপসমূহ গ্রহণে কার্যকর সহযোগিতার জন্য ডি-৮ নেতৃবৃন্দের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানও ছিল সময়োচিত। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বর্তমান চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ অন্যান্য ডি-৮ সদস্যরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত, এটি সুস্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ।
Leave a Reply