পবিত্র রমজান মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্র সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান কঠোর লকডাউনে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মীয়মাণ বিদ্যুতকেন্দ্রে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ও অগ্রহণযোগ্য। শনিবার সকালে সংঘটিত এই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিবর্ষণে ৫ শ্রমিক নিহত এবং শতাধিক শ্রমিক আহত হন। উল্লেখ্য, কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে চীনের সহযোগিতায় দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ কর্তৃক। শ্রমিকদের দাবি, রমজানে শ্রমঘণ্টা ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ১০ ঘণ্টা করা এবং মার্চ মাসের বেতনসহ প্রতি মাসের পাঁচ তারিখে বেতন প্রদান। মালিকপক্ষ অধিকাংশ দাবি মেনেও নিয়েছিলেন। তবে আলোচনার এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ পর্যায়ে পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘটে গুলিবর্ষণের ঘটনা। এর পেছনে স্থানীয় উন্নয়নবিরোধী কুচক্রী মহলের ইন্ধনের অভিযোগও উঠেছে। জেলা প্রশাসকসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেই প্রত্যাশা। মালিকপক্ষ নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। দুঃখজনক হলো জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে এর আগেও ২০১৬ সালে একাধিক সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। করোনার দুঃসময়ে এই জাতীয় ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। বর্তমান সরকার বিশেষ করে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যথাসম্ভব দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এক কোটি ওএমএস কার্ডের আওতায় অন্তত পাঁচ কোটি জনসংখ্যাকে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে রেশনিংয়ের আওতায়। দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে দেয়া হচ্ছে নানাবিধ নিত্যপণ্য। এসব বাস্তবতা এবং জনহিতকর উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রায় সর্বস্তরের মানুষ পথে নামতে চায় ব্যক্তিগত আয়-উপার্জনের অনিবার্য তাগিদে। মানুষের এই ব্যক্তি উদ্যোগ ও আগ্রহের প্রশংসা করতেই হবে অকুণ্ঠচিত্তে। যে কারণে বর্তমানে শিল্প-কারখানাসহ প্রকল্পগুলো সচল রাখা হয়েছে। সরকার প্রধানত তাদের কথা চিন্তা করেই লকডাউন পরিস্থিতির শর্ত কিছু শিথিলও করেছে। যেমন ব্যক্তিগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চালু রাখার অনুমতি দিয়েছে নির্মাণ শিল্প, পোশাকসহ কিছু শিল্প-কারখানা। তবে এও সত্য যে, সব শিল্প-কারখানায় সর্বত্র এই শর্ত মানা সম্ভব নয়। এগুলোর সঙ্গে শ্রমজীবীদের আহার, বাসস্থান, যাতায়াত ইত্যাদিও জড়িত। এর পাশাপাশি রোজা ও ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে সর্বস্তরের মানুষের চাহিদাও বেড়ে যায় অনেকগুণ। এ পর্যায়ে কোটি কোটি শ্রমজীবীর বেতন-বোনাসের বিষয়টিও জড়িত ওতপ্রোতভাবে। এর জন্য সরকারী প্রণোদনার পাশাপাশি আবশ্যক বেসরকারী উদ্যোগও। সরকার পোশাক খাত, কৃষি, শিল্প সেক্টরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা দিয়েছে গত বছর। জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তা সহায়ক হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতিই মূলত বিশ্বায়নের সঙ্গে সংযুক্ত। পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির চেহারা কি দাঁড়াবে তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, চরম এক মহামন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। আর জ্বালানির সঙ্গেই জড়িত যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। সুতরাং বিদ্যুতকেন্দ্রটির নির্মাণ অব্যাহত রাখতে হবে। পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে বের করতে হবে সমাধানের পথ। সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে তৃতীয় পক্ষের উস্কানি সম্পর্কে।
Leave a Reply